মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীদের লড়াই তীব্র হচ্ছে। দুই বছর আগে জান্তা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই লড়াইয়ে দেশটি ক্রমশই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সোমবার মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক চৌকিতে হামলা চালিয়েছে জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীরা।
নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের এই সংঘর্ষ আরও নতুন দুটি ফ্রন্টে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সম্প্রতি সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। গত মাসের শেষের দিকে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু তিনটি গোষ্ঠীর সদস্যরা জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে একযোগে সমন্বিত হামলা শুরু করে। ইতোমধ্যে তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে হটিয়ে কিছু শহর ও সামরিক চৌকির দখল নিয়েছে।
গত সপ্তাহে দেশটির সামরিক বাহিনীর নিয়োগকৃত প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিদ্রোহ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটির জেনারেলরা বলছেন, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
জাতিগত সংখ্যালঘু তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত জোটের সদস্য আরাকান আর্মি (এএ) মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে লড়াই চালিয়ে আসছে। আরাকান আর্মির মুখপাত্র খিন থু খা বলেছেন, রাখাইনের রাথেডাং এবং মিনবিয়া এলাকার মধ্যবর্তী প্রায় ২০০ কিলোমিটার এলাকায় সামরিক বাহিনীর কয়েকটি চৌকি দখলে নিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু চৌকি জয় করেছি এবং আরও কিছু জায়গায় লড়াই চলছে।’’
রাথেডাংয়ের একজন বাসিন্দা বলেন, সোমবার ভোরের দিকে বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা গেছে। পরে কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। সামরিক বাহিনী এলাকায় প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। রাথেডাংয়ের প্রশাসনিক ভবনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে দেখা গেছে।
ভারতের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চিন রাজ্যেও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহীদের সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্রোহীরা দুটি সামরিক শিবিরে হামলা চালিয়েছে বলে একজন ভারতীয় কর্মকর্তা ও হামলার বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মিজোরামের একটি জেলার ডেপুটি কমিশনার জেমস লালরিঞ্চনা বলেছেন, মিয়ানমারে সংঘাত থেকে বাঁচতে প্রায় ৫ হাজার মানুষ ভারতের মিজোরাম রাজ্যে প্রবেশ করেছে।
চিন রাজ্য মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বছরের পর বছর ধরে শান্ত ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সেখানকার স্থানীয় হাজার হাজার বাসিন্দা সামরিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। চলমান সংঘাতের বিষয়ে মন্তব্য জানতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post