জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) ওয়ার্কিং গ্রুপ ১৪টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। এই পর্যালোচনায় প্রতিটি দেশের সরকারকে তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা তুলে ধরতে হবে।
এ তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। সোমবার (১৩ নভেম্বর) জেনেভায় চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইউপিআরে নিজেদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ইউপিআরে পেশ করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন প্রতিরোধে ২০০৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে দুদক জেলা পর্যায়ের অফিসের মাধ্যমে নিজেই দুর্নীতির মামলা দায়ের করতে পারে। এতে দুর্নীতি দমন কমিশন বেশি স্বাধীনতা লাভ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য আইনভঙ্গ করে শক্তি প্রয়োগ করলে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। ২০১৫ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় এক হাজার ৭০০ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময়ের মধ্যে ৮ হাজার ৫০০ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপব্যবহার রোধ করতে এ আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বসতে প্রস্তুতি শেষ করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইউপিআরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রায় ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সোমবার জেনেভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অংশ নেবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পর্যালোচনা সভায় অংশ নেবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জেনেভায় মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর শ্রম অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, লিঙ্গ সমতা এবং মানবপাচারের মতো ইস্যু স্থান পাবে।
গত বুধবার (৮ নভেম্বর) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউপিআর সভায় অংশ নেবে বাংলাদেশ। মোট তিনবার ইউপিআর সভায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিটি সভা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। আমরা এটা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি যে, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।
তবে মানবাধিকারের সব ধারা আমরা মেনে নিলেও সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের জন্য মৃত্যুদণ্ড বিলোপ ও এলজিবিটি ইস্যুকে আমরা গ্রহণ করিনি। জেনেভায় ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের পর্যালোচনা বৈঠক গত ৬ নভেম্বর শুরু হয়। আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত বৈঠক চলবে। এবারের ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ১৪ দেশের মানবাধিকার পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
২০০৯ সালে প্রথম ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় যোগ দেয় বাংলাদেশ। এরপর ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে তৃতীয় দফায় যোগ দেয় বাংলাদেশ। এবার চতুর্থবারের মতো ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের পর্যালোচনায় যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ।
মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭টি সদস্য দেশ ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপটি প্রতিটি জাতিসংঘের সদস্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। তবে জাতিসংঘের যেকোনো সদস্য দেশই এই পর্যালোচনায় অংশ নিতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post