পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্টের দক্ষিণ-পশ্চিমে নেপালের রোলওয়ালিং হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত দুর্গম চূড়া ‘ফার্চামো’। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি ২০ হাজার ৩০০ ফুট উঁচুতে। বাংলাদেশের দুই অভিযাত্রী এম এ মুহিত ও কাজী বিপ্লব একসঙ্গে সফলভাবে আরোহণ করেছেন এই পর্বতে। অভিযানটি পরিচালনা করেছে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব (বিএমটিসি)।
গত ৩ নভেম্বর সকাল ৯টায় ‘ফার্চামো’র চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান এম এ মুহিত ও কাজী বিপ্লব। তাদের আরেক সহযাত্রী নুরুননাহার নিম্নি অসুস্থতার কারণে সামিট সম্পন্ন করতে পারেননি। তারা তিন জনই বিএমটিসি’র সদস্য। তাদের মধ্যে এম এ মুহিত দুই বার এভারেস্টে আরোহণ করেছেন।
বাংলাদেশের পর্বতারোহী দলটি গত ২৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত পুরো অভিযাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর আমরা নেপালের রামেছাপ বিমানবচন্দর থেকে লুকলার উদ্দেশে বিমানে চড়ি। সেদিনই আমরা পৌঁছাই এভারেস্ট অঞ্চলের প্রবেশমুখ হিসেবে পরিচিত হিলারি তেনজিং বিমানবন্দরে।
এটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানরবন্দর হিসেবে কুখ্যাত। সেদিনই আমরা ট্রেকিং শুরু করি। বিকালে পৌঁছাই মঞ্জো। ২৭ অক্টোবর আমরা যাই নামচে বাজার।এর পরদিন বিশ্রাম নিয়ে ২৯ অক্টোবর পৌঁছাই থামে। ৩০ অক্টোবর আবারও বিশ্রামে ছিলাম। ৩১ অক্টোবর থ্যাংবো। ১ নভেম্বর আমরা ৪ হাজার ৮০০ মিটার উচুঁ বেসক্যাম্পে পৌঁছাই।
২ নভেম্বর আমরা ৫ হাজার ৭০০ মিটার উঁচু তাশি ফুক হাইক্যাম্পে যাই। সেখান থেকে ১০০ মিটার নিচে আমাদের সহযাত্রী নিম্নির শারীরিক অবস্থা নাজুক হতে শুরু করে। প্রধান শেরপা দাওয়া তেনজিং তাকে নিয়ে ফিরে যায়। চিরিং ওয়াংচু শেরপা এবং ফুর কাঞ্চা শেরপা আমাদের সঙ্গে থাকে। হাইক্যাম্পে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যায়।
দিবাগত রাতে অর্থাৎ ৩ নভেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় হেডটর্চের আলোয় আমরা চূড়ার উদ্দেশে রওনা দেই। আধা ঘণ্টা পর ক্র্যাম্পন পয়েন্টে পৌঁছাই। তখন তেমন বাতাস ছিল না। মূল রোপে দেড় ঘণ্টা থাকি। তাশি লাপচা পাসকে ডানে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। দিগন্তে ভোরের লাল আভা দেখার সময় ফিক্সড রোপে আমরা জুমার লাগিয়ে আরোহণ শুরু করি।
তিনটি কঠিন জায়গায় ১০০ মিটার দড়ি লাগানো ছিল। সেসব জায়গা ৮০-৯০ ডিগ্রি খাড়া। ভোর ৬টার সময় জুমার শুরু করি, এটি শেষ হয় সকাল ৯টার দিকে সামিটে পৌঁছে। আমরা উড়িয়েছি বাংলাদেশের পতাকা। ‘ফার্চামো’র চূড়ায় পা রাখার আগেই প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়। চূড়ায় ১৫ মিনিটের মতো ছিলাম। মনে হচ্ছিল সব জমে যাবে। হাইক্যাম্পে ফিরতে পৌনে ১১টা বেজে যায়। সেদিনই বেসক্যাম্প হয়ে বিকাল ৫টার মধ্যে থ্যাংবো চলে আসি।‘
‘ফার্চামো’ পর্বতশিখরে পৌঁছাতে বাংলাদেশের পর্বতারোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে ইস্পাহানি টি লিমিটেড। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা-কাঠমান্ডু-ঢাকা টিকিটে ২০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post