ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলে নির্বিচারে হামলার এক মাস গড়িয়েছে। এতে ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু। এ অবস্থায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গাজার জন্য মানবিক সহায়তার বিষয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করছেন। তবে গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার জন্য দায়ী ইসরাইল এই সম্মেলনে থাকছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যাক্রোঁর এক সহযোগী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরাইলসহ সব সরকারেরই গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নতিতে আগ্রহ রয়েছে।’ গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রতিশোধমূলক ইসরাইলি সামরিক অভিযানে ১০ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ নারীও শিশু।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, বন্দীদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত গাজায় কোনো জ্বালানি সরবরাহ করা যাবে না এবং হামাসের সাথে কোনো যুদ্ধবিরতিও হবে না। এলিসি প্যালেস জানিয়েছে, ম্যাক্রাঁ মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন এবং বৃহস্পতিবারের সহায়তা সম্মেলন শেষ হলে এই জুটি আবার কথা বলবেন।
হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বুধবার বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় তিন দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ছয় মার্কিন নাগরিকসহ হামাসের হাতে আটক এক ডজন বন্দীকে মুক্তি দেয়ার জন্য আলোচনা চলছে। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কাতার ‘এক থেকে দুই দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ১০ থেকে ১৫ বন্দীকে মুক্ত করতে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে।
মিসরের মতো কাতারও গাজা উপত্যকায় আরও সাহায্য আনার প্রচেষ্টায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। এলিসি প্যালেস জানিয়েছে, ম্যাক্রোঁ মঙ্গলবার মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সাথে কথা বলেছেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় গত সপ্তাহে বলেছে, বৃহস্পতিবারের সহায়তা সম্মেলনটি ১০ ও ১১ নভেম্বর বার্ষিক প্যারিস শান্তি ফোরামের সাইডলাইনে তাড়াহুড়ো করে একসাথে করা হয়েছে।
সমস্ত প্রধান দাতাদের কাছাকাছি যাওয়া এবং গাজায় সাহায্যের গতি বাড়ানোর ধারণাটি হলো এতে খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরবরাহ, আর্থিক এবং মানবিক সহায়তার মতো পণ্যের অনুদানের বিভাগ থাকবে। কিছু আরব দেশ প্রতিনিধি পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তার প্রধানমন্ত্রী এবং মিসর এক মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠাবে বলেও জানানো হয়েছে।
ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রধান চার্লস মিশেল এবং উরসুলা ভন ডার লেইনের সাথে গ্রিস, আয়ারল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। তবে সম্মেলন শেষে কোনো যৌথ ঘোষণার পরিকল্পনা থাকছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ইউরোপিয় কূটনীতিক সূত্র এএফপিকে বলেছে, ‘ফ্রান্স চায় না যে এই সম্মেলনটি ইসরাইলের নিন্দা করার একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হোক।’
গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ভাগ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। ইসরাইলি অবরোধে বন্দী এলাকা থেকে সাধারণ নাগরিকরা পালিয়ে যেতেও পারছে না। এ কারণে মানবিক ‘বিরতি’ বা সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে আকস্মিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। পাল্টা হামলায় গাজায় টানা বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা এক মাস ধরে এই হামলা-পাল্টা হামলা চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post