মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবে চাকরি হারিয়ে অথবা নানা সমস্যায় যেসব প্রবাসী ওমান থেকে দেশে আসতে চান, তাদের জন্য সম্পূর্ণ অলাভজনক ও সেবামূলক কাজের জন্য ব্যক্তিগত খরচে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দেন ওমানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কিং জালান কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান। গতকাল (সোমবার) প্রবাস টাইমের লাইভে এসে তিনি এই ঘোষণা দেন।
আব্দুল মান্নান বলেন, বর্তমান এই সংকটময় মুহূর্তে ওমান প্রবাসীদের সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিশেষ ফ্লাইট নিয়ে। ফ্লাইট আছে তো টিকেট না, আবার টিকেট আছে তো তার দাম আকাশচুম্বী। প্রথমদিকে ওমান থেকে বাংলাদেশের বিশেষ ফ্লাইটের টিকেটের মূল্য ১২০ রিয়াল ( ২৬৪০০ টাকা) হলেও এখন তা দাম বেড়ে ২২০ রিয়ালে (৪৮,৪০০) বিক্রি হচ্ছে। টিকেটের দাম এমন বৃদ্ধির পিছনে মান্নান বলেন, মূলত এই ফ্লাইট গুলো পরিচালনা করছেন অধিকাংশই ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তানীরা। যে কারণে ফ্লাইটগুলো এখন শতভাগ কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। অপরদিকে একটা টিকেট কয়েকহাত পেরিয়ে এরপর যাত্রীর কাছে পৌঁছায়। এইসব কারণে টিকেটের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
মান্নান আরো বলেন, ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাস যদি অনুমতি দেয়, তাহলে একটা চার্টার ফ্লাইট ব্যবস্থা করতে যত খরচ হয়, সব আমি বিনিয়োগ করবো। এতে শুধুমাত্র যাত্রীদের থেকে টিকেটের মূল্য নেওয়া হবে। কোনো ধরনের প্রফিট নেওয়া হবেনা। সম্পূর্ণ মানবতার সেবায় এই কাজটি আমি পরিচালনা করতে চাই। সেক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে অনুমোদনের ব্যবস্থা করলে একটা বিমান ভাড়া করতে যতটাকা লাগে, সব আমি একাই দিবো। এতে আমাকে কোনো ধরনের লাভ দিতে হবেনা।
এ সময় লাইভের আরেক অতিথি চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের উপদেষ্টা এবং কমিউনিটি নেতা জবলুল আনোয়ার বাদল বলেন, এই বিশেষ ফ্লাইটের টিকেটের মূল্য নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি গুলোতে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ওমানে। টিকেটের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও এর লাগাম টেনে ধরতে সংশ্লিষ্টরা কেউ কাজ করছেনা। এমতাবস্থায় আব্দুল মান্নান সাহেবের এমন প্রস্তাব অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং খুবই প্রশংসনীয় একটা উদ্যোগ। তার এমন মহানুভবতার কথা ওমান প্রবাসীরা আজীবন মনে রাখবে। এই মুহূর্তে দূতাবাস থেকে যদি ফ্লাইটের অনুমতির ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আমি মনে করি ওমান প্রবাসীদের ফ্লাইট সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেইসাথে আব্দুল মান্নানের এই উদ্যোগকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ওমান এবং চট্টগ্রাম সমিতি ওমানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাদল।
আরো পড়ুনঃ ১২ অগাস্ট বাজারে আসছে করোনার ভ্যাকসিন, দাম পড়বে ২৫৪ টাকা
ওমানের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এ ব্যাপারে বলেন, দূতাবাস যদি আব্দুল মান্নানের এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাহলে খুবই অল্প মূল্যে প্রবাসীরা টিকেট পাবে এবং টিকেট নিয়ে কোনো ধরনের দুর্নীতি হওয়ার ও সুযোগ থাকবেনা। সেইসাথে ফ্লাইটের সঙ্কট ও সমাধান হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে দূতাবাস চাইলে এ কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে কমিউনিটির পক্ষথেকে দূতাবাসকে সহযোগিতা করা হবে। যেহেতু দূতাবাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোকবল নেই। সুতরাং মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয় চাইলে আমরা কমিউনিটির নেতারা স্বেচ্ছা শ্রম দিতে রাজি আছি। এরপরেও চাই, এই কঠিন মুহূর্তে এইসব অসহায় প্রবাসীরা দেশে চলে যাক।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসীদের মরার উপর খাড়ার ঘা
উল্লেখ্য: চট্টগ্রাম সাতকানিয়া থানার খাগরিয়া গ্রামের আলহাজ হাফেজ আহমাদ সওদাগরের দ্বিতীয় সন্তান আব্দুল মান্নান ২০০০ সালের ২৭ নভেম্বর ওমানে আসেন। বর্তমানে ওমানের জালান বানি বু আলি নামক স্থানের শীর্ষ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী হিসেবে তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। ওমানে তার ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, টেক্সটাইল, গ্যালাবিয়া ট্রেইলারিং সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ওমানের নানা সামাজিক কাজেও বেশ এগিয়ে আসেন। আব্দুল মান্নান ওমানের বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের আজীবন সদস্য এবং চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের একজন বিশিষ্ট মেম্বার। সেইসাথে প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা প্রত্যয় এর উপদেষ্টা হিসেবেও নানা সামাজিক কাজ করছে তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post