নিজের অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছিল না। অন্যের কাছ থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে ইমোতে কথা বলতেন পরিবারের সঙ্গে। প্রবাসী বেলাল যেদিন আত্মহত্যা করেছেন সেদিন সকালেও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে। এমনকি স্ত্রীর সঙ্গে উচ্চস্বরে বাগবিতণ্ডায় জড়াতে শোনেন আশপাশের লোকজন। সেদিন কথা বলেছিলেন স্থানীয় ফটিকছড়ির আইয়ুব নামের আরেক প্রবাসীর মুঠোফোন থেকে।
আইয়ুব বলেন, আমার ফোনে তার স্ত্রী একটা রেকর্ডিং পাঠিয়েছিলেন সর্বশেষ। সেখানে শোনা যায়, ‘কিস্তির টাকা দিতে পারিনি।’ প্রবাসী মাওলানা মো. বেলাল (৫০) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউপির পূর্ব মাইজভান্ডার গ্রামের মৃত খুইল্লে মিয়ার ছেলে।
চলতি বছর জুনের শুরুর দিকে বেলাল আর তার বড় ভাই হাসেম পরিবারের একটু সুখের আশায় প্রবাসে আসেন। ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে মুদাবি নামক স্থানে তারা বসবাস শুরু করেন। প্রবাসী বেলাল একটা সময় নানুপুর বাজার, পরে নাজিরহাট বাজারে ব্যবসা করেছেন। ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে প্রবাসে পাড়ি জমান।
তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক বেলাল কোনো ধরনের হাতের কাজ না জানা সত্ত্বেও প্রবাসে ‘আজাদ’ ((নির্দিষ্ট কোনো কর্ম ছাড়া) ভিসায় আসেন। এখানে এসে কাজ না জানায় শুরুতে কর্মহীনতায় ভোগেন। একটা সময় পর একটি কোম্পানিতে চাকরি করলেও সময়মতো বেতন জোটেনি। দেশ থেকে তার সঙ্গে আসা বড় ভাই হাসেমও চলে যান অন্য জায়গায় (ইবরা বাজারে)। ফলে নিজে পড়েন অর্থকষ্টে।
শনিবার বেলালের রুমমেট মোজাম্মেল বলেন, ‘বেলাল হুজুর। শারীরিকভাবেও সক্ষম ছিলেন না। ভারী কোনো কাজ করতে পারতেন না। দেশেও ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রবাসে এসেছেন। এখানে এসে সুবিধা করতে পারছিলেন না। দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আমাকে বারবার বলতেন। আমি নিজেও আশ্বস্ত করেছিলাম দেশে পাঠানোর জন্য সহযোগিতা করবো। বকেয়া বেতন আদায়ের অপেক্ষায় ছিলেন।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মোজাম্মেল আরও বলেন, শুক্রবার (৩ নভেম্বর) একসঙ্গে জুমার নামাজ পড়ে দুপুরের খাবারও খেয়েছেন আমাদের সঙ্গে। দুপুরে খেয়ে সবাই যখন ঘুমাতে গেলো, ঠিক ওই সময় বেলাল রান্নাঘরের পাশে গ্যাসের সিলিন্ডারের ওপর দাঁড়িয়ে রান্না বিমের সঙ্গে রশিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিকেল চারটার দিকে আমাদের আরেক রুমমেট তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। রাতে পুলিশ এসে সুরতহাল তৈরি করে মরদেহ মর্গে নিয়ে যায়।
ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বড় ভাই হাসেম ওমানে ছুটে আসেন। তিনি হাসপাতালে ভাইয়ের লাশ দেখে ভেঙে পড়েন। তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি আগেও ওমানে ছিলাম। বিদেশে কষ্টের কাজ করতে হয়। তুই আলেম মানুষ পারবি না। তারপরও সে আসার জন্য জোর করে। পরে তার জন্যসহ ভিসা সংগ্রহ করি। এভাবে করুণ পরিণতি হবে জানলে কখনই বিদেশে আসতে বলতাম না।
এদিকে বেলালের মরদেহ দেশে পাঠাবেন কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তার ভাইও। দেশে পাঠাতেও প্রয়োজন মোটা অংকের খরচ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post