বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সের খরা কাটলেও দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে এই খাতে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ কমেছে।
ঝড়টা বেশি গেছে ওভেন পোশাকের ওপর দিয়ে। এই ধরনের পোশাকের রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশ। নিট পোশাকে কমেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি বলছে, সদ্য সমাপ্ত মাসে ৩১০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এই আয় ছিল ৩৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাৎ কমেছে ৫১ কোটি ৩০ লাখ ডলার যা টাকার অংকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
বিজিএমইএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসেও রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে যায়।
তবে পরের কয়েকটি মাস দারুণ যায়। মে মাসে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, জুনে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ, জুলাই মাসে ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, অগাস্ট মাসে ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
দেশের প্রধান রপ্তানি খাতের পতন সামগ্রিক রপ্তানিকেই প্রভাবিত করেছে। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরের রপ্তানি আয় গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে।
অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে ধাক্কা
এর আগে চলতি মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির পরিসংখ্যান দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমতে থাকার মধ্যে তারা জানায়, অক্টোবরে দেশে প্রবাসী রেমিটেন্স আয় এসেছে ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৩০ শতাংশ রেমিটেন্স বেশি।
প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিটেন্স আগের চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের আগের দুই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহর প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক ধারায়।
রপ্তানি কমার তিন কারণ?
বিজিএমইএ সভাপতি এক প্রতিক্রিয়ায় তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দেশে শ্রমিক বিক্ষোভ।
ফারুক হাসান বলেন, “পোশাক রপ্তানি কমে যেতে পারে বলে দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে এসেছিলাম। গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজার পরিস্থিতি দেখে আমাদের তাই মনে হচ্ছিল। রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমছিল কয়েক মাস ধরে, ক্রেতা দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাচ্ছিল।”
‘চলমান সংকটের মধ্যে ইসরায়েল হামাস যুদ্ধ নতুন মাত্রা যোগ করেছে’- উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে ২০২৩ সালের রপ্তানি আয় আগের বছরের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে না। এবার পোশাকের বাজার কিছুটা সংকুচিত হবে এবং বাংলাদেশ এর প্রভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
রপ্তানি কমার পেছনে শ্রমিক বিক্ষোভের কী দায়- তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “শ্রমিক বিক্ষোভের কারণেও অক্টোবরে রপ্তানি কিছুটা কমেছে। সময় মতো পোশাক সরবরাহ করতে পারেনি অনেক কারখানা।”
নতুন মজুরি নির্ধারণে সরকার গঠিত বোর্ড যখন কাজ করে যাচ্ছে, সেখানে এ ধরনের সহিংস আন্দোলন মজুরি বোর্ডের কাজকেও বাধাগ্রস্ত করবে বলে শঙ্কার কথা জানান বিজিএমইএ প্রধান।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post