সৌদি আরবভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মালিকানা ও পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর আইডিবি ব্যাংকটির পরিচালনায় অংশ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। আইডিবির পক্ষে সবশেষ ব্যাংকটিতে পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ আল-মিদানী। এখন তিনি আর পর্ষদে নেই, ব্যাংকটি শেয়ারও ছেড়ে দেওয়া শুরু করেছে।
আইডিবি ব্যাংকটির মালিকানা ও পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এস আলম গ্রুপের সাথে ব্যাংকটির পরিচালনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের কারণে আইডিবি ব্যাংক থেকে সরে এসেছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, আইডিবি ব্যাংকটির পরিচালনায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
আইডিবি ব্যাংক থেকে সরে যাওয়ার ফলে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনায় আরও বেশি এস আলম গ্রুপের প্রভাব বাড়বে। এছাড়াও, ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য ও সাংগঠনিক কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আইডিবির শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে ব্যাংকটির একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ব্যাংকটিতে নানা অনিয়ম শুরু হওয়ায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে ব্যাংকটি ছেড়ে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আইডিবিও ছেড়ে গেল। এসব শেয়ার বর্তমান মালিকপক্ষ কিনে নিচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংক ৮ অক্টোবর ডিএসইতে পাঠানো শেয়ারধারণের মাসিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৩০ আগস্ট ব্যাংকটিতে আইডিবির ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬২৫টি বা ২ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার ছিল। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বর তা শূন্য হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটি থেকে পরিচালকও সরিয়ে নিয়েছে আইডিবি। এর আগে ২০১৮ সালে আইডিবি ইসলামী ব্যাংকের ৮ কোটি ৬৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করে দেয়।
এদিকে শেয়ারধারণের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সৌদিভিত্তিক আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সি তার ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে ইসলামী ব্যাংকে কোম্পানিটির এখন আর কোনো শেয়ার নেই। সব মিলিয়ে এক মাসেই ইসলামী ব্যাংকের ১২ শতাংশের বেশি শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে বিদেশিরা।
আরও যারা শেয়ার ছেড়েছে
১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি পরিচালনায় যুক্ত ছিল। ২০১৭ সালে একাধিক কোম্পানির নামে ২ শতাংশ করে শেয়ার কিনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ।
এরপর দেশি ও বিদেশি শেয়ারধারীরা একে একে ব্যাংকটি ছেড়ে চলে যেতে থাকেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় স্থানীয় উদ্যোক্তা ইবনে সিনা ট্রাস্ট। এরপর ওই বছরের মে মাসে কিছু শেয়ার বিক্রি করে দেয় আইডিবি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির শেয়ার ছেড়ে দেয় কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস। চলতি বছরের জুনে শেয়ার ও পরিচালক পদ ছাড়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। গত জুলাইয়ে শেয়ার ও পরিচালক পদ ছাড়ে সৌদি আরবের আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সি। এখন ব্যাংকটিতে একজন বিদেশি পরিচালক রয়েছেন। বাকিরা এস আলম গ্রুপসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি।
বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি
গত বছরের নভেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা আলোচনায় আসার পর ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখতে পারছে না। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের আলোচিত গ্রাহক অ্যাননটেক্স গ্রুপের একটি বন্ধ কারখানায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে নতুন করে ঋণ ছাড় করেছে ব্যাংকটি। গত এক বছরে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫১০ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি এখনো টাকার সংকটে ভুগছে। সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক মাঝেমধ্যে টাকা ছাপিয়ে ইসলামী ব্যাংককে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সব ব্যাংকের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমান নীতি প্রয়োগ করা উচিত। এটা না হলে আস্থার ঘাটতি আরও প্রকট হয়। এ জন্য ভালো বিনিয়োগকারীরা সরে যান। পর্যবেক্ষকে কাজ না হলে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে, পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post