আমরা জিলহজ্জের দোরগোড়ায় প্রথম প্রহরে পৌঁছে গেছি। রাব্বুল আ’লামীন উম্মতে মুহাম্মাদীকে চক্রাকারে কিছু সুবর্ণ সুযোগ দান করেছেন, যার মাধ্যমে এই উম্মত কম সময়ে অল্প আমলে বেশী নেকী হাসিল করতে পারে। তন্মধ্যে এই দশক একটি। এই দশক নিয়ে রাব্বে কারীম ক্বোর’আনে কারীমে শপথ করেছেন, এতেই এর ফজিলত অনুধাবন করা যায়।
মহিমান্বিত রমাদান সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, বুঝি, মানি ও প্রস্তুতি নিয়ে থাকি, কিন্তু রমাদান ছাড়াও যে এরকমের আরেকটি ফজিলতপুর্ণ মোক্ষম সুযোগ আমাদের জন্য এই জিলহজ্জের প্রথম দশকে রয়েছে সে ব্যাপারে আমরা অনেকেই বেখবর ও অন্ধকারে।
বুখারীর ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, “ইসলামের ৫ টি রুকনের সবকটিই আমরা জিলহজ্জে পালন করতে পারি, যা অন্য মাসে সম্ভব নয়”। আসলে তাই, রমজানে আমরা হজ্জ করতে পারিনা, কিন্তু এই দশকের প্রথম ৯ দিন রয়েছে শরিয়াহসম্মত ফজিলতপুর্ণ রোজা।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স) বলেন: ” গুরুত্ব ও ভালোবাসার দিক দিয়ে নেক আমল করার ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট জিলহজ্জের প্রথম দশকের মত ফজিলতময় আর কোন দিন নেই!! সাহাবারা (রা) জিজ্ঞাস করলেন: হে আল্লাহর রাসুল (স) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও? রাসুল (স) বললেন: হ্যাঁ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও। তবে যে ব্যক্তি জান মাল নিয়ে যুদ্ধের মাঠে গিয়ে আর ফিরে আসেনি তার বিষয় ভিন্ন। এই দিনগুলোতে তোমরা বেশী বেশী তাকবীর (আল্লাহু আকবার), বেশী বেশী তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বেশী বেশী তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) পড়ো” সহিহ মুসলিম।
আরো পড়ুনঃ ওমানের মাস্কাট এয়ারপোর্টে নতুন আইন জারী
হাদিসে উল্লেখিত তাকবীর তাহলীল ও তাহমীদের জন্য আমরা হাদীস থেকে পাওয়া ৩ টি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি।
১- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
২- সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।
৩- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা- শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শায়ইং ক্বাদীর।
প্রথম দশকে এই দোয়াগুলো অনেক বেশী চর্চা করুন, সাথে আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতে।
এই দশকের প্রথম ৯ দিনই আল্লাহর রাসুল (স) রোজা রাখতেন, সাহাবাদের রাখতে উৎসাহ দিতেন। সালফে সালেহীনরা সবাই এই রোজাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে পালন করতেন। বিশেষ করে আরাফার দিনের রোজা এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। নবিজি (স) বলেন: “আমি আশা রাখি যে, আরাফার দিনের রোজা পূর্বের ও পরের মোট দুই বছরের গুনাহের কাফফারা হবে” সহিহ মুসলিম।
আরও পড়ুনঃ ইয়েমেনে কিডন্যাপ ৫ বাংলাদেশী ওমান প্রবাসী নাবিক
রোজা কি ৯ই জিলহজ্জ হবে নাকি সৌদি আরবের আরাফার দিনে হবে সে বিষয়ে সামান্য এখতেলাফ আছে। কারণ সৌদি আরবে ৯ ই জিলহজ্জ যে দিন আরাফাহ হয় সেদিন আমাদের দেশ সহ অন্যান্য কিছু দেশে ৮ ই জিলহজ্জ, এখানেই মূলত মতবিরোধ। প্রসিদ্ধ ওলামাদের মত হলো এটি আরাফার সাথে সম্পৃক্ত রোজা, কারণ হাদিসে আরাফার দিনের রোজা উল্লেখ হয়েছে, ৯ ই জিলহজ্জের নয়। যারা প্রথম ৯ দিন রোজা রাখবে বা অন্তত ৮, ৯ জিলহজ্জ রোজা রাখবে তাদের আর এই মতবিরোধে পড়তে হবেনা। ১০ ই জিলহজ্জ কোরবানীর দিন যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য পশু জবেহের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই।
আসুন চেষ্টা করি প্রথম দশকের প্রথম ৯ টি রোজা রাখার, না পারলে অন্তত ৮, ৯ জিলহজ্জের রোজা, তাও না পারলে অন্তত সৌদি আরবে যেদিন আরাফাহ, সেদিনের রোজাটি রাখতে। তার সাথে উল্লেখিত তাকবীর, তাহলীল, তাহমীদের কথা যেনো ভুলে না যায়। রাব্বে কারীম সবাইকে তৌফিক দিন। আমীন।
আরও দেখুনঃ ৫জন ওমান প্রবাসী বাংলাদেশী কিডন্যাপের শিকার
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post