আরবের এক বিস্ময়কর বালক ক্বারি আলী আব্দুস সালাম আল ইউসুফ। সৌদি আরবে বয়সের দিক দিয়ে সবচেয়ে ছোট ইমাম হিসেবে যিনি সুপরিচিত। ১০ বছর বয়সেই একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কোরআন হেফজ করার পরই মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। হাফেজ হওয়ার পেছনে তার পিতার অবদান সবচেয়ে বেশী বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রতিনিয়ত পড়া মুখস্থ করানো, রিভিউ আদায় করা, পুনঃপুন শোনা সহ সকল ধরনের তদারকি তার পিতাই করতেন।
প্রথমদিকে স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন সে এক পৃষ্ঠা করে এবং সাপ্তাহিক ও গ্রীষ্মের বন্ধে প্রতিদিন ৩ পৃষ্ঠা করে মুখস্থ করতো। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার মাত্রা বাড়াতে থাকে। আরব জাহানের বড় বড় প্রিন্টিং এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো তার প্রচুর সাক্ষাৎকার নিয়েছে যা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিজস্ব কণ্ঠ ছাড়াও মক্কার ইমাম সহ আরব বিশ্বের ৬ জন বড় বড় ক্বারির সুরেও সে তেলাওয়াত করতে পারে। তার পেছনে সালাত আদায়ের জন্য দুর দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এসে ভিড় করে।
তার প্রতিটি কথাই তাকওয়াপূর্ণ সাবলীল এবং কৃত্রিমতামুক্ত। যারা কোরআন হেফজ করতে চান, তাদের জন্য রয়েছে তার উত্তম ব্যবস্থাপত্র ও নির্দেশনা। বিভিন্ন সাক্ষাতকারে সে যে বিষয়টি বুঝাতে চান তা হলোঃ কোরআনের সাথে লাগলেই তার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবেই পাবে, তার জীবন বরকতে ভরে যাবে।
আরও পড়ুনঃ দুবাইতে ৪ মাসেই ৮৫২ জনের ইসলাম গ্রহণ
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, জিবরাইল আঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরআন নিয়ে আসার কারণে তিনি হয়েছেন শ্রেষ্ঠ ফিরিশতা। উপাধি পেয়েছেন “রুহুল আমীন” (বিশ্বস্ত আত্মা)। ঠিক একই ভাবে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর (স) উপর কোরআন নাজিল হওয়ার কারণে তিনি হয়েছেন শ্রেষ্ঠ রাসুল (স)। যে ভূখণ্ডে কোরআন নাজিল হয়েছে সেটি হয়েছে শ্রেষ্ঠ নিরাপদ ও সম্মানের স্থান। যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে সে মাসটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস। যে রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে সে রাতটি পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। যে উম্মতের জন্য এ কোরআন এসেছে সে উম্মত শ্রেষ্ঠ উম্মতের মর্যাদা পেয়েছে। তদ্রূপ ভাবে যে ব্যক্তি কোরআন শিখে ও শিক্ষা দেন, আল্লাহর হাবীব (স) বলেন সেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।
আমরা চাইলে আমাদের সন্তানদেরকে এভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে পারি, আল্লাহর দরবারে ধর্না ধরতে পারি, আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দার নেক নিয়ত ব্যর্থ করে দেন না। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশিও কোরআন হেফজ করা যায়, যার জলজ্যান্ত অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে আমার কাছে।
একটি বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি, আমার স্ত্রীর দাদা (প্রিন্সিপাল ওয়াহিদুল্লাহ খান মাদানী) থেকে শুরু করে নীচের দিকে যতজন আছে (সে সহ) তন্মধ্যে মোট ৩২ জন কোরআনের হাফেজ রয়েছে, এদের মধ্যে ৬ জন আছে (চাচাতো শালা) আরব আমিরাতে, যার একজন ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, একজন ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, দুইজন বি.বি.এ, অন্য দুজন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, শারজায় অধ্যয়নরত। এদের প্রায় সকলের পেছনে গত রমজানে তারাবীহ পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। আমিও আমার বাচ্চাদের নিয়ে পরিকল্পনা নিয়েছি, আপনিও কোরআনময় জীবন সাজানোর জন্য এগিয়ে আসুন। রাব্বে কারীম পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী।
আরও পড়ুনঃ হিজাব করোনা প্রতিরোধে সহায়ক: মার্কিন গবেষণা
একটি তাৎপর্যপূর্ণ হাদীস শুনুন,
“من كانتِ الآخرةُ هَمَّهُ جعلَ اللَّهُ غناهُ في قلبِهِ وجمعَ لَه شملَهُ وأتتهُ الدُّنيا وَهيَ راغمةٌ”
الراوي : أنس بن مالك | المحدث : الألباني | المصدر : صحيح الترمذي
الصفحة أو الرقم: 2465 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
আনাস ইবনে মালেক হাদীসের বর্ণনাকারী, আল্লাহর রাসুল (স) বলেন: “যে ব্যক্তি এপারের (দুনিয়া) উপর ওপারকে (পরকাল) অগ্রাধিকার দিলো, (আল্লাহর পক্ষ থেকে সে বান্দার জন্য তিনটি সুসংবাদ)
১- আল্লাহ তার অন্তরে ধনাঢ্যতা ঢেলে দিবে (“অন্তরের ধনাঢ্যতা” শব্দটিকে ৫ বার পড়ুন, ভালো ভাবে অনুধাবন করুন)।
২- সে বান্দার এলোমেলো বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন বিষয়গুলোকে গুছিয়ে দিবে।
৩- আর দুনিয়াকে সে বান্দার পায়ে এনে বশ্যতা স্বীকার করাবে। (অর্থাৎ আখিরাতকে অগ্রাধিকার দিলে দুনিয়া এমনিতেই ফ্রি পাওয়া যাবে)।
তিরমিজি, হাদীসের মান সহীহ।
বিস্ময়কর ক্ষুদে ইমাম ক্বারি আলী আব্দুস সালাম আল ইউসুফ এর তেলাওয়াত শুনতে এই লিংকে ক্লিক করুন> https://youtu.be/REI57Vuv9e4
লেখকঃ মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম
ইন্টারপ্রেটার, জেনারেল ডিপার্টমেন্ট অফ কোর্টস, ওমান।
আরও দেখুনঃ বাংলাদেশের ক্ষুদে ক্বারির অসাধারন তেলাওয়াত
https://www.youtube.com/watch?v=Z_IrT-0QjS0
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post