ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পরিদর্শন করতে গিয়ে টাস্কফোর্স সদস্যরা মানি চেঞ্জারের কর্মীদের মারধর করছে বলে অভিযোগ করছে মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। ভয়ে অনেক মানি চেঞ্জার ডলার বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এই সুযোগে কিছু লোক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ৮ থেকে ৯ টাকা বেশি দামে খুচরা ডলার বিক্রি করছে। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্স প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই অভিযোগ তুলেন মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব সেখ হেলাল সিকদার। খুচরা ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্সে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের একটি প্রতিনিধিদল দাবি-দাওয়া নিয়ে টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক নীতি বিভাগের পরিচালক মো. সরওয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করেছে। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের ওপর টাস্কফোর্সের মারধর, গ্রাহকের শরীর তল্লাশি ও গালিগালাজসহ অপেশাদার আচরণের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। কেননা, এ অবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, কেউ অন্যায় করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার হতে পারে। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে। সর্বশেষ আমাদের পক্ষে থেকে দাবি জানানো হয়েছে, হয়রানি বন্ধ না করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন খুচরা ডলার ব্যবসার সনদ প্রত্যাহার করে নেয়। আর এ অবস্থা চললে বাজারে লেনদেন আরও কমে যাবে। তখন ডলার পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে রাজধানীর মতিঝিল দিশকুশা এলাকায় টাস্কফোর্সের পরিদর্শনকালে নিয়ন মানি চেঞ্জার্সের একজন বিক্রয়কর্মীকে মারধর করা হয়। একই ঘটনা ঘটে গুলশানের আব্দুল্লাহ মানি চেঞ্জারসে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, মানি চেঞ্জার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। টাস্কফোর্স মূলত ব্যবসায়ীদের ডলার লেনদেনের কাগজপত্র যাচাই করে। তাদের এ ধরনের আচরণ করার কথা নয়।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) মানি চেঞ্জারগুলোতে খুচরা ডলার ১১৬ টাকা থেকে ১১৭ টাকায় বিক্রি করেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রয়কর্মীরা। তবে ক্রেতাদের দাবি প্রতি ডলারে দিতে হয়েছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকা। রাজধানীর মতিঝিল থেকে ডলার কিনতে আসা আনিসুর রহমান বলেন, থাইল্যান্ড যাব, খুচরা ডলার লাগবে। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে পাইনি। তাই আজকে কয়েকটি মানি চেঞ্জার ঘুরলাম। ডলার নেই বলে জানাল। পরে একজনের কাছ থেকে ৪০০ ডলার কিনলাম। রেট নিল ১১৮ টাকা।
বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করায় গত সপ্তাহে সাতটি মানি চেঞ্জারের ব্যবসার লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই অভিযোগে আরও ১০টি মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।
রেমিট্যান্স-রপ্তানির ডলারের এক রেট
রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম এখন এক রেট করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছে। আগে যা ছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানিতে ডলারের দর হবে ১১০ টাকা। আগে যা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পসয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১০ টাকা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post