তথ্য গোপন করে তৃতীয় বিয়ে করলেও স্ত্রী ও সন্তানের পরিচয় না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে। প্রতারণামূলক বহুবিবাহের অভিযোগ এনে তৃতীয় স্ত্রী ডাক্তার সুমনা ইসলাম তার ১৪ মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সুমনা বলেন, আমার স্বামী আহসান হাবিব আমাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি এবং সন্তানের পিতৃপরিচয় অস্বীকার করে উল্টো আমার নামে নানান অপপ্রচার ও সামাজিকভাবে সম্মানহানি করছেন। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতা চাচ্ছি। এসময় তিনি সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থাকতে স্বামীর প্রতি অনুরোধ জানান।
ডা. সুমনা ইসলাম দাবি করেন, তিনি রাশিয়া থেকে এমবিবিএস পাসের পর ২০১৯ সালে পাবনা মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ করেন। ২০১৯ সালে পাবনা থাকাকালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একইবছরের ২ মার্চ আহসান হাবীব তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে পারিবারের সম্মতিতে পূর্বের স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের কাগজ দেখিয়ে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু আহসান হাবীব তার পূর্বের বিয়ের তথ্য গোপন করেন, যা তিনি জানতেন না।
লিখিত বক্তব্যে চিকিৎসক সুমনা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিবাহিত জীবনে কিছুদিন পর আহসান হাবীবের আচার-আচরণে আমার সন্দেহ হয়। তার বাড়িতে যেতে চাইলে বিভিন্ন ধরণের তালবাহানা করতে থাকে। নেত্রকোনায় স্থায়ীভাবে তার সঙ্গে থাকতে চাইলে সে জানায়- এটা সম্ভব না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আহসান পূর্বে আরও একাধিক বিয়ে করেছে। প্রথম সংসারে একটি ছেলে সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হুমায়রা রহমানের সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। এসব বিষয় হাবীবের কাছে জানতে চাইলে সে ক্ষীপ্ত হয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। আমি, আমার মা-ভাই তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ মহাদেবপুর গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের হত্যাচেষ্টা ও মারধর করে। এ ঘটনায় পরে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা করি।’
‘মামলার পর আহসান আরও হিংস্র হয়ে ওঠেন। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর একটি অভিযোগ দিই। পরে আমার সঙ্গে সে আপোস করলে আমি সংসার করার উদ্দেশে মামলাটি প্রত্যাহার করি। কিছুদিন পর আমি যখন সন্তান-সম্ভবা হয়, আর এ খবর আহসান জানার পর আমার সন্তান নষ্ট করতে চাপ দিতে থাকে। বলে- তা না করলে আমাকে ডিভোর্স দেয়া হবে। এরপর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’
সংবাদ সম্মেলনে এই নারী চিকিৎসক বলেন, আমার স্বামীর কর্মস্থল যখন নেত্রকোনায় ছিল সেখানে গেলে আমাকে ও আমার মাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় আমরা উদ্ধার হই। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর মামলা করেছিলাম। শুধু আমি নই, আমার আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রী আরিফা পারভীন বিভিন্ন সময়ে মামলা করেছিলেন। বর্তমানে আমার ১৪ মাসের কন্যা সন্তান আছে এবং আহসান হাবীব সন্তানের পিতৃপরিচয় ও ভরণপোষণ দিচ্ছে না। আমাকে ও ছোট্ট সন্তনকে সে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। এবছরের ২ ফেব্রুয়ারি আমাকে এবং আমার সন্তানকে তুলে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা।
ডাক্তার সুমনা ইসলাম বলেন, আমি সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও আহসান হাবীব আমাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। আমার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল করার চেষ্টায় তার বান্ধবী মালিহা মাহজাবিন নামে অজ্ঞাতনামা নারীকে দিয়ে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করে।
সুমনার নামে প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা:
সুমনা জানান, তার নামে ‘বাসুকা করপোরেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেন প্রকৌশলী আহসান হাবিব। এই প্রতিষ্ঠান নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় ৯৩টি টিউবওয়েল বসানোর কাজ পায়। এর বাবদ তিনি সুমনার কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা প্রতারণামূলক হাতিয়ে নিয়েছেন।
সুমনা বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের সব কাগজপত্র ছিল আমার নামে। যার টেন্ডার আইডি- ৫১০২৬২। দরপত্রের বিপরীতে বাসুকা করপোরেশন পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাবদ ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৬ টাকা ব্যাংক জামানত রাখে। জামানতের টাকা এখনও অসংগৃহিত রয়েছে। ঠিকাদারি কাজটি সম্পন্ন করার জন্য মালামাল কেনার উদ্দেশে আহসান হাবীব আমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যায়ক্রমে নেয়। অথচ বিল না দিয়ে কাজটি বাতিল করে ২০২১ সালের ৯ জুন পুনরায় দরপত্র আহবান করে। এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি নানাভাবে হুমকি দেয়। একইভাবে দ্বিতীয় স্ত্রী, শালিকা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে কাজ করে আহসান আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার সুমনা ইসলাম করেন, ‘আমি সংসার করতে চাই; নিজের স্ত্রীর স্বীকৃতি ও সন্তানের স্বীকৃতি চাই। পাশাপাশি তার নানামুখী অসম্মানজনক তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post