দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) অনুসন্ধানের মুখে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাচ্চু মিয়া। তাকে ইতোমধ্যে ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলাও শেষ পর্যায়ে। ফলে সাচ্চু এখন স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতির মুখোমুখি।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। একপর্যায়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে নিজের এবং স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বাধ্য হন সাচ্চু। কিন্তু এতেই বিপত্তি বাধে। বাস্তব সম্পদের সঙ্গে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীর ব্যাপক গরমিল পাওয়া যায়। এজন্য দুদকের পক্ষ থেকে আরও বিশদ অনুসন্ধান শুরু হলে তিনি হঠাৎ করেই কর্মস্থলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চাকরিতে গরহাজির।
সাচ্চুর দ্বারা বিভিন্ন সময়ে ঘুসবাণিজ্যের শিকার বেশ কয়েকজন পাসপোর্ট কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, সাচ্চু যেহেতু ছিলেন রক্ষণা প্রকৌশলী, সেহেতু তার অধীনে আইটি খাতের সব ধরনের মালামাল ও যন্ত্রাংশ মজুত রাখা হতো। কিন্তু চাহিদামাফিক ‘বকশিশ’ না পেলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রিলিজ করতেন না সাচ্চু। ফলে অনেক সময় বাধ্য হয়ে তাকে বাড়তি টাকা দিয়েই সার্ভিস নিতে হতো। এভাবে দেশের ৬৯টি পাসপোর্ট অফিস থেকে অনেকটা চাঁদাবাজির স্টাইলে ঘুস তুলতেন সাচ্চু। সূত্র জানায়, তবে যারা সাচ্চুকে ঘুস দিতেন তারাও বড় ঘুসখোর। কেননা পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকলে বা আবেদন জমা না হলে বিশেষ ঘুস চ্যানেলও বন্ধ হয়ে যায়। তাই অনেকটা চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতোই তড়িঘড়ি অফিসের কার্যক্রম চালু রাখতে সাচ্চুকে ঘুস দিতে কার্পণ্য করতেন না কেউ। এছাড়া নানারকম কেনাকাটায় কারচুপি করেও বড় ধরনের অর্থ তছরুপ করেন সাচ্চু।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, সাচ্চুর নামে-বেনামে খোলা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল অঙ্কের লেনদেন পাওয়া যায়। শুধু পূবালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টেই লেনদেনের অঙ্ক তিন কোটি টাকার বেশি। এছাড়া পাইওনিয়ার কম্পিউটার সার্ভিস নামের ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এসব অ্যাকাউন্টে লেনদেনের অঙ্ক পৌনে দুই কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক উপপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, সাচ্চু সারা দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিস থেকে নিয়মিত ঘুস নিতেন। এজন্য তিনি কয়েকটি বিকাশ ও নগদ এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করেন। এছাড়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে খোলা বিকাশ অ্যাকাউন্টেও (০১৭৫১১১৩০৩৫) লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ২০২১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে লেনদেনের পরিমাণ ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৫ টাকা।
দুদক জানায়, সাচ্চু ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা। ২০১২ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সাকুল্যে বেতন পান ৬৫ হাজার টাকা। অথচ তিনি অভিজাত জীবনযাপন করেন। চলাফেরা করেন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়িতে। এছাড়া রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের দুটি সুপরিসর ফ্ল্যাট রয়েছে তার।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, চিকিৎসার কথা বলে ১৩ জানুয়ারি ভারত যান সাচ্চু। কিন্তু এরপর তিনি আর কর্মস্থলে ফেরেননি। ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চাকরিতে যোগদানের জন্য তাকে একাধিকবার তাগাদা পত্র দেওয়া হয়। এমনকি পরপর তিনটি কারণ দর্শনানোর (শোকজ) নোটিশ করলেও তার সাড়া মেলেনি। গণমাধ্যম তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় সাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মন্ত্রণালয় থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post