নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ ও খরচ বহনের বিষয়টি খালি চোখে পার্থিব বিষয় মনে হয় থাকলেও এটি একটি মহান দ্বিনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর বিনিময়ে আল্লাহ আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন। তাই পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভরণ-পোষণ খরচ করার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের কৃপণতা করা উচিত নয়। অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো কোরআন ও হাদিসে পরিবারের জন্য ব্যয়ের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিজের ও পরিবারের জন্য বৈধ রিজিকের সন্ধান করা একজন মুসলিমের ফরজ বা অত্যাবশক দায়িত্ব।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেন, ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে।’ (মুসলিম, হাদিস ৯৯৪)
✪ অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (বুখারি, হাদিস, ৪০০৬)
✪ আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, খরচ কর, হে, আদম সন্তান আমিও খরচ করবো তোমার প্রতি। (বুখারি, হাদিস, ৪৯৬১)
পরিবারের লোকজনকে কারো মুখাপেক্ষী না করা
হজরত সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় রোগগ্রস্ত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পরিচর্যার জন্য আসতেন। আমি বললাম, আমার তো সম্পদ আছে। সেগুলো সব আমি ওসিয়্যাত করে যাই? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে এক-তৃতীয়াংশ?
তিনি বললেন, এক-তূতীয়াংশ করতে পার। এক-তৃতীয়াংশই বেশী। তোমার সন্তান-সন্ততি মানুষের কাছে হাত পেতে ফিরবে এমন দরিদ্র অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার তুলনায় তাদেরকে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। আর যাই তুমি খরচ করবে, তা-ই তোমার জন্য সদকা হবে। এমনকি যে লোকমাটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে তাও। আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করবেন এই আশা। তোমার মাধ্যমে অনেক লোক উপকৃত হবে, আবার অন্যেরা (কাফির সম্প্রদায়) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারি, হাদিস, ৪৯৬৩)
ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের অগ্রাধিকার
আবু হুরায়রা রা. থেকে আরেক হাদিসে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উত্তম সদকা হল যা দান করার পরেও মানুষ অমুখাপেক্ষী থাকে। উপরের হাত নীচের হাতের চাইতে শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরন-পোষণ তোমার জিম্মায় তাদের আগে দাও। (কেননা) স্ত্রী বলবে, হয় আমাকে খাবার দাও, নয়তো তালাক দাও। গোলাম বলবে, খাবার দাও এবং কাজ করাও। ছেলে বলবে, আমাকে খাবার দাও, আমাকে তুমি কার কাছে রেখে যাচ্ছ? (বুখারি, হাদিস, ৪৯৬৪)
আরেক হাদিসে শিহাব যুহরী রহ. মালিক ইবনু আওসের সূত্রে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ নাযীরের খেজুর বিক্রি করে ফেলতেন এবং পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য সঞ্চয় করে রাখতেন। ( বুখারি, হাদিস, ৪৯৬৬)
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post