বিশ্বের অনেক শহরে জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত। নাগরিকরা যেসব সুযোগ সুবিধা পেতে চান তার সবরকমের বন্দোবস্ত থাকে এসব শহরে। দুয়েকটির নাম শুনলে হয়তো আপনিও ব্যাগ গুছিয়ে থাকার জন্যে রওয়ানাও করে দেবেন। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বাসযোগ্য শহরের সূচক অনুযায়ী, কয়েকটি শহরে সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান গত ১৫ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এমনই কয়েকটি শহর নিয়ে জানা যেতে পারে।
১। ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং নিখুঁত অবকাঠামো ; সব মিলিয়ে ভিয়েনার আকর্ষণ সবাইকে মুগ্ধ করে।
বাসযোগ্যতার সূচকে এক নম্বরে থাকা অস্ট্রিয়ার এই রাজধানীর জন্য মোটেই নতুন কোনও ঘটনা নয়। শুধুমাত্র ২০২১ সালে কোভিড মহামারিতে এই শহরের যাদুঘর এবং রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ থাকায় স্বল্প সময়ের জন্য ভিয়েনার অবস্থান নিচে নেমেছিল। ভিয়েনার সংরক্ষিত ঐতিহাসিক নিদর্শন, নির্ভরযোগ্য গণ-পরিবহন ব্যবস্থা, শিশুদের লালনপালনের সাশ্রয়ী ব্যয় এবং শহরের ক্যাফে, থিয়েটার ও এমনকি ওয়াইনারিগুলোর সাথে সহজ যোগাযোগ; এসব মিলিয়ে ভিয়েনা সারা জীবনের জন্য থাকার মতো একটি জায়গা।
২। মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ এবং মহামারির সময় দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন থাকার ফলে মেলবোর্ন এবং সিডনির স্কোর একসময় নিচে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন শহর দুটি আবার তালিকার শীর্ষ দশে ফিরে এসেছে। বিশেষ করে মেলবোর্ন শহর সারা বিশ্বব্যাপি সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সূচকে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য শহরটির বাসিন্দারাও বেশ গর্ব নিয়ে চলেন।
মেলবোর্নে রয়েছে খাবারদাবারের অবিশ্বাস্য রকমের ব্যবস্থাপনা, শিল্পকলা, নানা ধরনের ইভেন্ট এবং অ্যাট্রাকশন। সেইসাথে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মতো আন্তর্জাতিক খেলা। স্থানীয় বাসিন্দা মোরেল বলেন, ‘মেলবার্নিয়ানরা খুবই সহজ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। এমন কিছু নেই এবং এমন কেউ নেই যার চাহিদা এই দারুণ শহরটি পূরণ করে না।’
৩। ভ্যানকুভার, কানাডা
তিনটি ক্যানাডিয়ান শহর চলতি বছর বাসযোগ্যতার তালিকায় শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিয়েছে। এরমধ্যে উন্নত সংস্কৃতি এবং পরিবেশের স্কোরের কারণে ভ্যানকুভার রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ নম্বর স্থানে। এই ভ্যানকুভার শহর থেকে নাকি অরণ্য, সমুদ্র এবং আকাশে যাওয়া খুবই সহজ। এখানকার গণ-পরিবহনে চড়ে কিংবা বাস, বাইক, ট্রেন এবং নৌকা ব্যবহার করে একই দিনে নয়নাভিরাম ইংলিশ বে থেকে শুরু করে গ্রাউস মাউন্টেনে অর্থ্যাৎ শহরের সর্বোচ্চ পয়েন্টে যেতে পারবেন।’ সহজ অভিবাসন নীতির সুবাদে নানা দেশের ব্যবসায়ীরাও এখন ভ্যানকুভারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
৪। ওসাকা, জাপান
বাসযোগ্যতার তালিকায় দশম অবস্থানে থাকলেও, শীর্ষ দশে পৌঁছানো এশিয়ার একমাত্র শহর ওসাকা। কিন্তু স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সূচকে নিখুঁত ১০০ স্কোর পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক পরিবারের আয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, কিন্তু জীবনযাত্রার নিচু ব্যয় ওসাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি বিশাল সুবিধা।
পানি, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণ ফিসহ বাসিন্দাদের বাড়ি ভাড়া কানাডিয়ান ডলারের হিসেবে মাস প্রতি মাত্র ৭০০ ডলার। একই বাড়ির ভাড়া অন্য যায়গাতে ১২০০ ডলারেও মেলা কঠিন। অ্যাপার্টমেন্ট ছোট ছোট হলেও এগুলো নতুন এবং বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
এখানকার হোটেল রেস্তোরাঁয় খাবারও মেলে বেশ সস্তায়। শহরের বাসিন্দা জেমস হিলস ব্রিটেন থেকে এসেছেন। তার দেশে ঘরের বাইরে খেতে গেলে পকেট ফাঁকা যায়। সেই তুলনায় ওসাকার মানসম্পন্ন রেস্তোরাঁগুলোতে আশ্চর্যজনক বাজেট-বান্ধব দামে খাবার যায়।
৫। অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড
ওসাকার সাথে তালিকায় যৌথভাবে রয়েছে অকল্যান্ড। অকল্যান্ডে যারা থাকেন তাদের বেশিরভাগই মাত্র ২০ মিনিট গাড়ি চালিয়ে একটি সুন্দর নির্জন সমুদ্র সৈকতে চলে যেতে পারবেন।
শহরের দোরগোড়ায় রয়েছে এই অত্যাশ্চর্য জলজ বিশ্ব একইভাবে শহরটির চারপাশে রয়েছে দেশীয় গাছের জঙ্গল, যেখানে হারিয়ে গেলে মনেই থাকবে না যে আপনি কোনও শহরের কাছাকাছি আছেন। নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম শহর হিসাবে অকল্যান্ডের বাসিন্দারা বিশ্বমানের ইভেন্ট উপভোগ করতে পারেন। যার মধ্যে চলমান ২০২৩ ফিফা নারী বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো মেগা ইভেন্ট রয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post