গত এক সপ্তাহে ওমানে দুটি নতুন আইন জারি করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা আইন ও শ্রম আইন নামের ওই দুই প্রবিধান কেবল ওমানের নাগরিকদের উপরই নয় বরং ওমানে বসবাস করা প্রবাসীদের উপরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। অর্থ্যাৎ সামাজিক সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে যে বিশেষ আর্থিক সেবা দেশটি চালু করতে যাচ্ছে প্রবাসীরাও তার সুফল পাবেন।
মোহাম্মদ আল তাই নামক এক আইন বিশেষজ্ঞ ওমান অবজার্ভারকে বলেছেন, সামাজিক সুরক্ষার জারি করা বিধিগুলো ব্যাপক সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় তৈরি করা হয়েছে। ওমানিদের পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রবাসীরাও এর সুফল পেতে যাচ্ছেন। বর্তমানে অনুদান প্রকল্পের আওতায় শ্রমিকেরা কিছু কিছু সুবিধা হয়তো পান তবে তা একেবারেই ক্ষণস্থায়ী। এর বদলে প্রবাসীরা দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় সেবা পেতে যাচ্ছেন। যার ফলে নিয়োগকর্তা বেতনের একটা নির্দিষ্ট অংশ শ্রমিকদের কাজের শেষে দিতে বাধ্য থাকবেন।
শ্রম আইন জারি করার পর প্রবাসীদের অনেকেই গণমাধ্যমের কাছে তাঁদের প্রশ্ন নিয়ে হাজির হচ্ছেন। যাদের অনেকেই ওমানে দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। তাঁদের এই কাজের সময় সঞ্চয় আইনে গণনা করা হবে কিনা- তারা তা নিশ্চিত হতে চান। আবার কারোর কারোর প্রশ্ন, অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিকেরা এই আইনের সুবিধাদি পাবেন কিনা তা নিয়ে। এর উত্তরে ওমানের শীর্ষ এক গণমাধ্যমের দাবী, এর উত্তর এখনই খোলাসা করে দেয়া যাচ্ছেনা। তবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে আইন কার্যকর হলে এই আইনের আর্টিকেলগুলোর বিস্তারিত বিবরণ জানা যাবে।
এদিকে নতুন শ্রম আইন অনুযায়ী প্রবাসীদের লিখিত অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁদের পাসপোর্ট কিংবা ব্যক্তিগত কাগজপত্র জমা রাখতে পারবেনা। রাখলে তা বে আইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া এই আইনের ফলে নির্দিষ্ট সময়ে প্রবাসীদের দেশে ফেরার বিমান টিকিট সহ ৩০ দিনের ছুটির ব্যবস্থা করতেও নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাধ্য থাকবে।
ওমান কাউন্সিল ও মন্ত্রীপরিষদে ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনার পর গত সপ্তাহে ওই শ্রম আইন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেদিন ওমানের মহামান্য সুলতান হাইতাম বিন তারিক এক রয়েল ডিক্রির মাধ্যমে এই আইনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন। অনুমোদনের আগে বিভিন্ন বিভাগ দপ্তরের অংশগ্রহণে আইনটি নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা করা হয়েছিলো। সংশ্লিষ্টদের দাবী, এবারের শ্রম আইন কর্মসংস্থানে শৃঙ্খলা তৈরি করার পাশাপশি ওমানের সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
অনেকের অভিযোগ, কর্মক্ষেত্রে দক্ষ প্রবাসীর চেয়ে স্থানীয় ওমানি শ্রমিককে অধিক অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ফলে নতুন এই আইনে ওমানি শ্রমিকরা লাভবান হলেও কিছুটা বঞ্চিত হয়েছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। নতুন এই আইনের উল্লেখযোগ্য ধারাগুলো হলো-
১। কোনো একটি কাজে ওমানি শ্রমিক নিয়োগ করার সুযোগ থাকলে নিয়োগকর্তা চাইলেই প্রবাসী শ্রমিককে বরখাস্ত করতে পারবেন।
২। কর্মসংস্থানে ওমানিরা নেতৃত্বে অগ্রাধিকার পাবেন
৩। দিনের কর্মঘন্টা দুই ভাগে ভাগ করে মাঝে একঘন্টা বিরতির সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে
৪। শ্রমিকের অসুস্থকালীন ছুটির দিনের সংখ্যা বাড়বে।
৫। যেসব প্রতিষ্ঠানে মহিলা কর্মীদের সংখ্যা ২৫ জনের বেশি সেখানে আলাদা বিশ্রামের স্থান তৈরি করে দিতে হবে।
৬। কর্মজীবীমহিলাদের শিশু যত্নের জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ ঘন্টা রাখা হবে এবং ৯৮ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটিরও ব্যবস্থা থাকবে।
৭। প্রতিটি শ্রম প্রতিষ্ঠানকে তার বার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে, যাতে কর্মীদের সংখ্যা, তাদের বেতন এবং চাকরির শূন্যপদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
৮। বিশ্রামের সময়কাল বাদ দিয়ে শ্রমিককে দিয়ে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা কাজ করানো যাবে।
নতুন এই শ্রম আইন ওমান ভিশন ২০৪০ বাস্তবায়নের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটির বাস্তবায়ন হলে ওমানের চলমান শ্রম বাজারে চাঙ্গা ভাব ফিরবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post