ভারতের মণিপুর রাজ্য এখন অকল্পনীয় জাতিগত সহিংসতায় আক্রান্ত। এবার সেখানে এক স্বাধীনতাসংগ্রামীর স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। সহিংসতা শুরুর পর এখন সামনে আসছে ভয়াবহতার আরও সব তথ্য।
কয়েক দিন আগেই মণিপুর সহিংসতার একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিওতে দেখা যায় একদল উত্তেজিত জনতা দুই তরুণীকে বিবস্ত্র করে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এবারের ঘটনাস্থল রাজ্যের কাকচিং জেলার সেরু গ্রাম। অভিযোগ অনুসারে, ৮০ বছর বয়সী এক নারীকে তাঁর ঘরে তালাবদ্ধ করা হয়। পরে একটি সশস্ত্র দল সেই ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।
আগুনে জীবন্ত পুড়ে মারা যাওয়া নারীর নাম ইবেতোম্বি। তাঁর স্বামী এস চুরাচাঁদ সিং একজন স্বাধীনতাসংগ্রামী ছিলেন। তাঁকে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম সম্মাননা দিয়েছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৮ মে। তখন সেরুর মতো স্থানগুলোয় ব্যাপক সহিংসতা ও গুলিবিনিময় হয়েছিল। সহিংসতার আগে সেরু ছিল সুন্দর একটি গ্রাম। গ্রামটির অবস্থান রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে। এনডিটিভি দেখেছে, এখন গ্রামটিতে রয়েছে শুধু পোড়াবাড়ি ও দেয়ালজুড়ে বুলেটের গর্তের চিহ্ন।
উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে গত মে মাস থেকে জাতিগত সহিংসতা চলছে। উপত্যকায় বসবাসকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইতি ও পাহাড়ে বসবাসকারী খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলছে এই সহিংসতা। মেইতিদের তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবিকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত। সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর একটি সেরু।
ইবেতোম্বির নাতি প্রেমকান্ত ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা তাঁকে উদ্ধার করতে পারিনি। আগুন পুরো ঘরটিকে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো।
প্রেমকান্ত’র ভাষ্যমতে, তিনি নিজেই অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। দাদিকে বাঁচানোর চেষ্টাকালে তাঁর উপরেও গুলি করা হয় যা তার বাহু ও ঊরু ছুঁয়ে যায়।
প্রেমকান্ত বলেন, যখন আমরা আক্রমণের শিকার হই, তখন দাদি আমাদের পালাতে বলেছিলেন। বলেছিলেন ঝামেলা শেষ হলে আমরা যেন তার কাছে ফিরে আসি। আমরা দূরে যাওয়ার সময় তাঁর শেষ কথা ছিল, ‘আমাকে নিতে এসো’।
সংঘাত শুরুর প্রায় দুই মাস পর প্রেমকান্ত তাঁদের বাড়ির স্থানটিতে ফিরে আসেন। ধ্বংসাবশেষে তিনি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের সঙ্গে তার দাদুর একটি ছবি পান। যে ছবিটি তাঁর দাদির খুবই প্রিয় ছিল।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post