গত তিন দশক থেকে প্রতি বছর ফেনীতে হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স আসছে। গত অর্থবছরেও যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। ঝুঁকি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ না থাকার কারণে উৎপাদনশীল খাতে অর্থ বিনিয়োগ না করে আয়ের সিংহভাগই ভোগবিলাস আর আবাসন গড়ার পেছনে ব্যয় করছেন প্রবাসীরা।
ফেনীর জনপদে সবুজ বৃক্ষরাজি ছাপিয়ে জেলাটির অলিগলিতে আমেরিকা, লন্ডন ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের নামে গড়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া অসংখ্য ভবন। এগুলোর বেশিরভাগ গড়া হয়েছে প্রবাসীদের টাকায়।
প্রবাসীদের লেনদেনের জন্য ব্যাংকে গড়ে ওঠেছে বিশেষ বুথ ও ডেস্ক। সেসব বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য সব সময় প্রবাসীদের স্বজনদের লাইন লেগে থাকে। গত তিন যুগ ধরে ব্যাংকগুলোর এমন চিত্র।
ফেনী জেলার মোট জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৮ লাখ। এদিকে, ফেনীর জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা তিন লাখ আট হাজার ৩০৭। বাস্তবে এ সংখ্যা সরকারি হিসেবের তিনগুণেরও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রেমিট্যান্স অর্জনে ফেনীর অবস্থান গত দুই দশক ধরে প্রথম সারিতে। এখানে সরকারি-বেসরকারি ৪৪টি তফসিলি ব্যাংকের শাখা রয়েছে ১৩৯টি। এর মধ্যে হুন্ডি ও মোবাইল ফোনের হিসেব ছাড়াই শুধু সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আট বছরে প্রবাসীরা বৈধ পথে ১৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। একই সময় ইসলামী ব্যাংকের ছয় শাখায় এসেছে ১১ হাজার ৪২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে পাঠিয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের কাছে এ টাকার নিরাপদ বিনিয়োগ মানেই সঞ্চয় আর ভোগবিলাস। প্রবাসী টাকার প্রবাহে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে ফেনীর জীবন ব্যবস্থা।
বেলজিয়াম প্রবাসী মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, আমরা যারা ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করি, তারা প্রায় সবাই পরিবার নিয়ে স্থায়ী হয়ে যাই। সন্তানরা প্রবাসের কালচারেই বড় হয়। তারা আমার দেশের কালচারের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। তখন ওদের নিয়ে নিজ দেশে বসবাসের চিন্তাই করতে পারি না। নিজ দেশে আসা হয় বেড়ানোর জন্য। তাই নিজ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের আগ্রহ হয় না। তখন একটা ঠিকানার জন্য বাড়িতে বিনিয়োগ করি। এতে বেড়াতে এলে সন্তানদের থাকার পরিবেশ পাওয়া যায়। অন্যদিকে, বাড়ির আয় থেকে দেশে মা, বাবা, ভাই ও বোনদের খরচ যোগানো হয়।
সৌদি আরব প্রবাসী বাচ্চু বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই ২২ বছর সেখানে ব্যবসা করেছি। এখন দেশে ফেনীতে বেকারি ও ড্রিংকিং ওয়াটারের আধুনিক কারখানায় ৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। প্রবাসে কলকারখানা করতে সেখানকার সরকার সহযোগিতা করে। সেখানে সব কিছুতেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস। দেশে প্রতিষ্ঠান গড়তে দফতরে দফতরে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এখনও হচ্ছে। এসব হয়রানির কারণে প্রবাসীরা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে চায় না। তখন বাড়ি করার ব্যবসায় ঝুঁকছেন সবাই।’
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মনির আহমেদ বলেন, ফরেন রেমিট্যান্সের প্রবাহের কারণে ফেনীর জায়গার দাম আকাশ ছোঁয়া। নগর-মহানগরের তুলনায় ফেনীতে জায়গার দাম অনেক বেশি। এখানকার প্রবাসী ছাড়া মধ্যবিত্তরা জায়গা কিনে দোকান বা বাড়ি করার ইচ্ছা কল্পনাও করতে পারে না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post