নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ১২ যুবককে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে মিয়ানমারে বন্দি রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বন্দিদের মুক্তির জন্য পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে তারা।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে তাদের মুক্তি দাবিতে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন স্বজনরা।
১২ যুবক হলেন- মানিকপুর গ্রামের মো. নাদিম, চৈতনকান্দার রতন মিয়া, একই গ্রামের আছান, উলুকান্দির মো. মনির হোসেন, বিশনন্দীর মো. সজীব, মো. কবির হোসেন, শরিফপুরের মো. জুয়েল, কড়ইতলার মো. বিল্লাল হোসেন, বিশনন্দী পশ্চিমপাড়ার মো. সজীব, চৈতনকান্দার সাফায়েত হোসেন, মো. সফিকুল এবং মো. রফিকুল ইসলাম।
লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়নের ১২ জন যুবক প্রায় চার মাস আগে দালালদের চক্রান্তে পড়ে জাহাজে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে বের হন। বিষয়টি কারও জানা ছিল না। বর্তমানে তারা মিয়ানমারের মালাবাইন শহরের কাজিটন এলাকায় বন্দি আছে। কয়েকদিন পরপর দালাল চক্র বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে বিকাশে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে খাবার খেতে দেবে না বলেও হুমকি দেয়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আড়াইহাজার উপজেলায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে এক আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র ও তাদের স্থানীয় এজেন্টরা। আর মানব পাচারকারী এই চক্রের ভয়ঙ্কর ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রামের অনেক যুবক। অনেকে আবার প্রাণও হারাচ্ছেন। ওই দালাল চক্রটি ফুঁসলিয়ে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে আড়াইহাজার থেকে অনেক তরুণ ও যুবকদের মিয়ানমারে নিয়ে বন্দি রাখে। মুক্তিপণ না দিলে সেই তরুণদের ভাগ্যে ঘটছে নির্মম পরিণতি।
এরই মধ্যে আড়াইহাজারের কড়ইতলা, রামচন্দ্রদী, মানিকপুর, চৈতনকান্দা, দয়াকান্দা, টেটিয়া ও শম্ভুপুরা থেকে অনেক যুবককে এভাবে পাচার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার জিম্মি দশায় থাকা অবস্থায় দালালচক্রের নির্যাতনে নিহত হন আমিনুল (৩৯) নামের এক যুবক। এসব ঘটনায় আড়াইহাজার থানা পুলিশ আবুল হোসেন নামের দালাল চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
মিয়ানমারে বন্দি বিল্লাল হোসেনের মা সেলিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে মিয়ানমারে আটকে রেখে অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে। আমাকে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে দালাল চক্র। টাকা নেই বলে আমার ছেলেকে মুক্ত করে আনতে পারছি না। আমি ছেলের মুক্তি চাই।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিখোঁজ ও জিম্মি ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করেছি। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার আমরা করবো।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক আহাম্মেদ বলেন, আমরা একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে তার পরামর্শে কাজ করবো। প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সব ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post