শেষ দশ বছরে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যে দেশে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি যাচ্ছে, সেখান থেকে প্রবাসী আয় আসা কমছে। আর জনশক্তি রপ্তানির তেমন সুযোগ নেই এমন দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাসী আয় বাড়ছে। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এদের কেউ কেউ বলছেন, হুন্ডি প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রাখছে। কেউ বলছেন, দেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার সঙ্গে এই পরিবর্তনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ পাচার হওয়া অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে ফিরে আসছে। কারণ প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে অর্থ আনলে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনাও পাওয়া যায়।
এখন প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে সৌদি আরব থেকে। সরকারের বার্ষিক প্রতিবেদন অর্থনৈতিক সমীক্ষা–২০২৩ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গেছে। এর একটি বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক টানাপোড়েন। দেশ থেকে সেখানে যাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ এখন ফেরত আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রবাসী আয়ের শীর্ষ পাঁচ উৎস হচ্ছে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ইউএই, যুক্তরাজ্য ও কুয়েত। সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই পাঁচ দেশ থেকেই এসেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ রেমিট্যান্স। তবে বিদায়ী অর্থবছরে সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে। অন্যদিকে বাকি তিন শীর্ষস্থানীয় উৎস যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০১২–১৩ অর্থবছরে দেশের মোট প্রবাসী আয়ের সাড়ে ২৬ শতাংশ এসেছিল সৌদি আরব থেকে। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে সৌদি আরবের অংশ কমে সাড়ে ১৭ শতাংশে নেমেছে। আর ২০১২–১৩ অর্থবছরে দেশের মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় ১৩ শতাংশ এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যা ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২২–২৩ অর্থবছর শেষে বেড়ে প্রায় ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশে উঠেছে। গত ১০ বছরে প্রবাসী আয়ে শতাংশের হিসাবে সৌদি আরব, ইউএই, ওমান, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের হিস্যা কমেছে। এর বিপরীতে অংশ বেড়েছে কাতার, বাহরাইন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২২–২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৫২ কোটি ডলার এসেছে। একই সময়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে প্রায় ৩৭৭ কোটি ডলার। এই দুই দেশ থেকেই এসেছে মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় এক–তৃতীয়াংশ। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে দেশে মোট ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। আগের বছরের তুলনায় সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ইউএই থেকে প্রবাসী আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৬ শতাংশ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় আড়াই শতাংশ ও যুক্তরাজ্য থেকে বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post