গতকাল সোমবার থেকে পশ্চিম ফিলিস্তিনে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিপুলসংখ্যক ইসরায়েলি বাহিনী জেনিন শহরের শরণার্থী শিবিরে অনুপ্রবেশ করে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছে। চালিয়েছে ড্রোন হামলাও। সূত্রমতে এই হামলায় কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংস হামলা চালানোর পেছনে ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকারকে সমর্থন ও সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল ইসরায়েলের সেনারা যখন জেনিনের জনবহুল শরণার্থী শিবিরে এবং আকাশপথে একের পর এক হামলা চালায়, তখন এ নিয়ে সাফাই গেয়েছে হোয়াইট হাউস। তারা উল্টো ব্যাপারটাকে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকার বলে পক্ষ নিচ্ছে।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল বলেছে, ‘হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ও অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতার বিপরীতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও নিজেদের জনগণকে রক্ষার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূলকথা—বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষা করা। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র ইসরায়েলের নৃশংস সামরিক অভিযানের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া বলে দিচ্ছে, ইসরায়েলের লাগাম টানার ইচ্ছা নেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। মার্কিনীদের এই সমর্থন জেনিনে ইসরায়েলি অভিযান জোরদার হওয়ায় উদ্বেগ আরও বাড়িয়ের দিচ্ছে।
থিংক ট্যাংক ইউএস/মিডল ইস্ট প্রজেক্টের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল লেভি আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার ধারণা, অতীতে যেমন ঘটতে দেখেছি, ভবিষ্যতেও একই ঘটনা আমরা বারবার দেখব। মার্কিন প্রশাসন পেছন থেকে ইসরায়েলকে সমর্থন জোগাবে। আর ইসরায়েল সরকার যা ইচ্ছা, তা–ই করবে।’
লেভির মতে, ফিলিস্তিনে সংকটময় পরিস্থিতি আরও বেড়ে যাক এটা বাইডেন প্রশাসন চায় না। তবে এসব নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সঙ্গে নিজেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ। যা ফিলিস্তিন পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ করে দেবে।
ইসরায়েল যখন জেনিনের শরণার্থী শিবিরে সাধারণ মানুষের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে দেওয়া সহায়তা অব্যাহত রেখে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
হামলার ব্যাপারে ইসরায়েল বলছে, তাদের উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের নিবৃত করা। কিছুদিন আগে দু’জন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী গুলি চালিয়ে চারজন ইসরায়েলিকে হত্যা করেন। এর জবাবে শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালালো ইসরায়েল।
হোয়াইট হাউসের দেয়া বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের কথা একবারও উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি বলা হয়নি উত্তেজনা কমানোর কথাও । এরপর গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বেসামরিক মানুষের জীবনহানি ঠেকাতে সম্ভাব্য সব সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।’
সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন নীতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে বলে আশঙ্কা জানিয়ে ফিলিস্তিনি থিংক ট্যাংক আল–শাবাকার মার্কিন নীতিবিষয়ক ফেলো তারিক কেনি–শাওয়া বলেন, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন এক জটিল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের’ প্রতীকী কথাবার্তা বলা থেকে বিরত রয়েছে ওয়াশিংটন। এমনকি এখনকার সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সংযত থাকার কথাও বলছে না তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এত কিছুর পরও ইসরায়েলকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত রাখা আশ্চর্যজনক ঘটনা নয়। গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ৩৮০ কোটি ডলার সহায়তা পায় ইসরায়েল।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রায়ই অধিকৃত পশ্চিম তীরে সামরিক তল্লাশি–অভিযান চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলে ক্ষমতায় আসার পর ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তি অনেক বেড়ে গেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post