ইউরেশিয়ার কেন্দ্রে এবং হরমুজ প্রণালীর নিকটে অবস্থিত ইরান ভূকৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের জনসংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি এবং এটি বিশ্বের ১৭তম জনবহুল দেশ। দেশটির জনগণ শিক্ষিত এবং কর্মচঞ্চল। প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা ইরানে প্রাকৃতিক গ্যাসের যে মজুদ আছে, তা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জ্বালানী তেলের মজুদেও দেশটি অন্যান্য আরব দেশগুলোর চাইতে যোজন যোজন এগিয়ে।
সুপার পাওয়ার হওয়ার মতো সব ধরণের উপাদানই ইরানে আছে তবুও যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বিবেচনায় দেশটির অর্থনীতির বেহাল দশা। মাথাপিছু আয় চারহাজার ডলারের কিছু বেশি। বিনিয়োগের প্রতি ধনিক শ্রেণির অনীহাই এর মূল কারণ। পাশাপাশি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালের পুরো সময়টাতেই ইরান ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাটিয়েছে, যা ইরানের মানুষের জীবনমানকে মন্দায় ফেলে দেয়। নচেৎ ইরানের অর্থনীতির চাকা যেভাবে ঘুরছিলো তাতে পশ্চিমা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করাটা ছিলো কেবল সময়ের ব্যাপার।
ইরানের শিল্পখাতও তেমন সুবিধাজনক নয়, রপ্তানিযোগ্য সম্পদের বেশিরভাগই জীবাশ্ম জ্বালানীর সাথে সম্পৃক্ত। শিল্পখাতের একক নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে, তাই সরকারের আদর্শ বিরোধী লোকজনের ব্যবসা এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত হতে থাকে। এভাবেই বুনিয়াদী সম্পদ বা জনকল্যাণের জন্য সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে যা একটা সময়ে দুর্নীতির বড় ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।
তবে সেই ইরানই এখন সুপার পাওয়ার হওয়ার দৌড়ে নেমেছে। পারমাণবিক শক্তিতে সম্পদের বড় অংশই বিনিয়োগ করছে তারা। যে কারণে পশ্চিমা শক্তির সম্মিলিত নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার ব্যপ্তি বিবেচনায় এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দেশ। তবুও নতুন করে নিজের শক্তি দেখাতে আরম্ভ করেছে দেশটি। চীনের সাথে সখ্যতা বেড়েছে, রাশিয়ার সাথেও ইরানের বন্ধুত্ব গভীর। সম্প্রতি সৌদির সাথে সম্পর্কোন্নয়নও ঘটেছে। অস্ত্র রপ্তানীতেও দেশটির অবস্থান তালিকার উপরের দিকে। ইরানের সব সমীকরণই এখন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র শক্তিকে চিন্তায় ফেলার মতো। এতোসব নিষেধাজ্ঞার পরেও ইরানের ক্রমবর্ধ্মান শক্তিমত্তা নিশ্চয়ই তাদের মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post