রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেওয়া বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার ছিল চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। এবং পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি শুক্রবার এক অডিওবার্তার মাধ্যমে এই বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন—প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘণিষ্টতার কারণে একসময় গোটা রাশিয়ায় তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘পুতিনের বাবুর্চি’ নামে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর তথ্য অনুসারে, পিএমসি ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন ১৯৬১ সালে জন্ম নেন। ঘটনাচক্রে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং প্রিগোজিনের জন্ম একই শহরে— রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে। ইয়েভগেনি প্রিগোজিন একাধিকবার কারাবাসের সাজা খাটা আসামিও। ১৯৭৯ সালে, আঠারো বছর বয়সে চুরির অভিযোগে আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। সেই সাজা খেটে বের হওয়ার দু’বছর পর আবারও চুরি-ডাকাতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে এবং আদালতে সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ১৩ বছর কারাবাসের সাজা হয় তার। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে হটডগ ও অন্যান্য ফাস্টফুড বিক্রির দোকান খোলেন প্রিগোজিন, একই সময়ে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও পরিচয় হয় তার। ওই সময় সদ্য ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি থেকে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনে বদলি হয়ে এসেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, পুতিনের সঙ্গে পরিচয়ে সূত্র ধরে তৎকালীন ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ততদিনে রাশিয়ার একজন উঠতি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছেন তিনি। পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সূত্রে ক্রেমলিন ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে তিনি পরিচিতি পান ‘পুতিনের বাবুর্চি’ নামে। পরে এই নাম তার পরিচিত মহলেও ছড়িয়ে পড়ে। ক্রেমলিনের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক থাকায় গোটা নব্বইয়ের দশক এবং তার পরের দশক বিভিন্ন লোভনীয় সরকারি ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন প্রিগোজিন। এসব ঠিকাদারি কাজ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও উপার্জন করেন তিনি। সম্ভবত এই অর্থ দিয়েই বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার গড়ে তুলেছেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, তারপর নিজেই হয়েছেন এই কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী ও কমান্ডার।
পিএমসি ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের অধিকাংশই জীবনের কোনো না কোনো সময় কারাগারে সাজা খেটে আসা আসামি। মূলত অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সরকারি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করে ওয়াগনার গ্রুপ। সিরিয়া, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকাসহ অনেক দেশেই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের। তবে এই বাহিনীর যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগও উঠেছে একাধিকবার। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। তার কয়েক মাস পর রুশ বাহিনীর অংশ হিসেবে তাতে যোগ দেয় ওয়াগনার গ্রুপ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post