গাজীপুরের কালিয়াকৈর বন থেকে রিয়াদ হোসেন (২১) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের অর্ধগলিত উদ্ধার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় নিহতের চাচা নাঈম হোসেনকে (৩৪) গ্রেফতারের পর হত্যার নেপথ্যের কারণ বেরিয়ে এসেছে। গ্রেফতারকৃত নাঈমের স্ত্রীর সাথে রিয়াদের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি রিয়াদের পরিবারকে বলার পরও সমাধান হয়নি। এরপর তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নাঈম। তারই অংশ হিসেবে গাজীপুরের বনের ভেতরে নিয়ে নিজের টিশার্ট খুলে রিয়াদের গলায় পেচিয়ে হত্যা করেন তিনি।
র্যাবের কাছে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন নাঈম। শনিবার (১৭ জুন) রাতে অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরপর মাদনপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. ক. মোস্তাক আহমেদ। হত্যার শিকার মিরপুর প্রাইম ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিয়াদ হোসেন গত ১২ জুন থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নিহত রিয়াদ ও গ্রেফতারকৃত নাঈমের বাড়ী দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলাী পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামে।
র্যাব জানায়, গত ১৬ জুন রাত সাড়ে ৭ টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রতনপুর ধোপাচালা এলাকার বনের ভেতর ফাঁকা জায়গা থেকে রিয়াদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার পকেটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র ছিল। এরপর তার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পরে এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।
পরকিয়া কাল হলো রিয়াদের
গ্রেফতারকৃত নাঈম জানান, তিনি ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন। সেই সময় তার স্ত্রীকে ভাতিজা রিয়াদ দেখাশোনা করতেন। সেই সুবিধার্থে চাচীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই বিষয়টি নাঈম হোসেন সন্দেহ করতেন। নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর রিয়াদের নিকট আত্মীয়দের বিষয়টি জানান তিনি। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় তাকে হত্যার জন্য মনস্থির করেন।
ভাড়াটে খুনিতে কাজ না হওয়ায় নিজেই হত্যায় অংশ নেন নাঈম
নাঈমের স্ত্রীর সাথে পরকিয়ার বিষয়টিতে কোনো সমাধান না পেয়ে রিয়াদকে হত্যার জন্য পলাশ নামে একজন ভাড়াটে কিলার ঠিক করেন। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই চুক্তি করেন নাঈম। কিন্তু কিলার পলাশ রিয়াদকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানালে নাঈম নিজেই হত্যা মিশনে অংশ নেন। হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নাঈম ২০২২ সাল থেকে গাজীপুরে পরিবারসহ ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন। গত ২০ জুন নাঈম রিয়াদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে তাকে কল দেন। এরপর ১৩ জুন তাকে কল করে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় ডেকে নিয়ে আসেন। পরে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। শেষে রিয়াদকে হত্যার জন্য পলাশকে বললে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন। তখন নাঈম নিজেই রিয়াদকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। গল্পে গল্পে রিয়াদকে কালিয়াকৈরের ধোপাখোলা এলাকার বনের ভেতর নিয়ে যান। এরপর পুরনো বিষয় তুলে কথা-কাটাকাটি শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার গায়ে থাকা টিশার্ট খুলে রিয়াদের গলায় জড়িয়ে তাকে হত্যা করেন। এরপর লাশ রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান নাঈম।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post