গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে এসেছি ছোট ছেলে শারজিল আপন আর বৌমা ডা. নাজিয়ার সঙ্গে সময় কাটাতে। ওরা সময় করে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে। যাই দেখি ভালো লাগে, হতে পারে সন্তানদের সঙ্গ আমাদের এই সুখের কারণ। গত ৬ জুন, আমরা এমন একজন বিশেষ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিকাল কাটিয়েছি, যার স্কুলশিক্ষক বাবা বলেছিলেন- পারলে পিএইচডি কোরো, যাতে ন্যাপ নেতা প্রফেসর মোজাফফর আহমেদের মতো সালাম পাও। মায়ের ইচ্ছা ছিল মাদ্রাসায় পড়ে ছেলে ধার্মিক হবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তিনি এখন বিশ্বখ্যাত ন্যানো টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ। তিনি ইতিমধ্যে বেশ কিছু মৌলিক গবেষণা করে বড় বড় দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নজর কেড়েছেন।
অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকার কথা তার সমসাময়িক সবাই অবগত। ১৯৬৯ সালে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে ১৯৭২ সালে জাপানে যান। টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ১৯৭৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন মিস ফৌজিয়াকে। ১৯৮২ সালে সিংগাপুর এসে যোগ দেন শিক্ষকতা পেশায়। সিংগাপুর ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসার হিসেবে দীর্ঘ সময় কাটান, সম্প্রতি অবসরে গেছেন।
১৯৮৯-২০১৪ তিনি জাপান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। বর্তমানে Indian Institute of Information Technology, Design and Manufacturing (IIITDM), জবলপুর-এর ভিজিটিং প্রফেসর। অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সম্পর্কে আমার চাচা শ্বশুর, পৈতৃক নিবাস কুমিল্লার দেবিদ্বার, রাষ্ট্রদূত মো. আবদুল হান্নানের এলাহাবাদ গ্রামের পাশের গ্রাম মাশিকারা। তিনি নিজে ড্রাইভ করে আমাদের নিয়ে গেলেন, তার ন্যানো টেকনোলজি গবেষণা কেন্দ্রে। জালান বুকিত মেরাহ রোডে কাটিং এজ টেকনোলজির ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অবস্থিত।
তারই ১০০২ নম্বর ভবনে মুস্তাফিজ চাচার গবেষণা চলছে। প্রতিষ্ঠানের নাম mikrotools, Integrated Multi-Process Micro Machining Centre. ওয়েবসাইট, www.mikrotools.com ।
পরিচিত হলাম তার দুজন সহযোগী সিঙ্গাপুরিয়ান চাইনিজ Tan Wei yong এবং মিয়ানমারের মেয়ে Nora -এর সঙ্গে।
তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারিজের জন্য সুক্ষাতিসুক্ষ (Nano) পার্টস তৈরির মেশিন উদ্ভাবন করেন, সম্প্রতি একই মেশিনে বিভিন্ন আকৃতির মাইক্রোনিক টুলস তৈরির মেশিন উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছেন বিশ্বের সংশ্লিষ্ট জগতে। কানাডা, ভারত, জার্মানি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক এবং আমেরিকা চড়া দরে তার উদ্ভাবিত মেশিন ইন্ডাস্ট্রির কাজে এবং ছাত্র ও গবেষকদের জন্য কিনে নিয়ে গেছে।
চাচা আমাদের বোঝানোর জন্য বলছিলেন, তার তৈরি টুলসের আকার আমাদের মাথার চুলের অর্ধেকরও কম সাইজের। ন্যানো টেকনোলজির নাম শুনলেও, এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা আমার ছিল না। আজ তেমনি এক মেশিনে টুলস তৈরির প্রক্রিয়া দেখে আমার বিস্ময় চরমে পৌঁছে। জানলাম অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমানের নামে ইতিমধ্যে তিনটি মৌলিক উদ্ভাবন পেটেন্টেড হয়েছে এবং এরমধ্যে দুটি উদ্ভাবন বাণিজ্যিকভাবে চলমান রয়েছে।
Prof. Rahman’s main field of research is innovative micro/nano manufacturing covering both conventional and non-conventional machining processes and Design and Development of machine Tools and Systems for Micro/Nano Manufacturing.
He is the first researchers in the world to establish many innovative technologies for advanced manufacturing. Prof. Rahman has already guided 28 PhD students. He received research grants of over 10 million Singapore dollars.
Prof. Rahman has authored more than 500 journal and conference papers in very reputed international journals and conference proceedings. He has presented more than 100 papers as Keynote, Plenary and Invited addresses in very reputed international conferences.
He has received many awards for his innovative research and some of the significant ones are:
1. William Jonson Gold Medal (UK) for Lifetime Achievement in Advancement of Material and Processing Technology in 2009;
2. Outstanding achievement award from Japan Society of Mechanical Engineers in 2005;
3. Outstanding Achievement Awards from the Singapore Institute of Engineers in 2003.
এই গুণী এবং নিরহংকার মানুষটি নিজে ড্রাইভ করে আমাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেলেন। কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিজল।
দেশপ্রেমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মুস্তাফিজ তার উদ্ভাবন বাংলাদেশের কাজে লাগাতে চান। তিনি বাংলাদেশে এ বিষয়ে সংলিষ্টদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার উদ্ভাবিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে আন্তরিকভাবে আগ্রহী।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে এমন গবেষক আমাদের নিশ্চিতভাবে একান্ত প্রয়োজন। হতে পারে এই গবেষকের হাত ধরেই বাংলাদেশ একদিন কাটিং এজ টেকনোলজির আন্তর্জাতিক জগতে অংশীদারিত্ব এবং বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
শ্রদ্ধেয় মুস্তাফিজ চাচার সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।
শেলীনা আফরোজা, পিএইচডি
প্রাক্তন সচিব
(সিঙ্গাপুর, ৬ জুন, ২০২৩)
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post