বিয়ে দু’জন মানুষ ও দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করার বেশ পুরোনো ধর্মীয় এবং সামাজিক রীতি হলেও দিনে দিনে বিয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের “ফ্রাই অ্যান্ড পার্কার প্রতিবেদন-২০২১” বলছে, ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩৮% অবিবাহিত ছিল। ১৯৯০ সালে এই হার ছিল ২৯%। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গত ৫০ বছরে বিয়ের হার ৬০% কমেছে। ইনস্টিটিউট ফর ফ্যামিলি স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কখনো বিয়ে না করা প্রাপ্তবয়স্কদের হার ২১% থেকে ৩৫% শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালে এই হার ১৪% বেড়েছে।
এ তো শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান। বিশেষজ্ঞরা বলছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়; সারাবিশ্বেই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ের প্রবণতা কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৭০ সালে যেখানে বয়স ২০ এর কোটায় পৌঁছালেই বেশিরভাগ মানুষ বিয়ে পিঁড়িতে বসতেন। বর্তমানে, পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটি ৩০ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২৮ বছরে ঠেকেছে। বিয়ের প্রতি অনাগ্রহ বাড়ার পেছনে বেশকিছু কারণ তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে অন্যতম হলো, লিভ টুগেদার ও দুজনের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কের হার বৃদ্ধি। এর ফলে অনেকেই দাম্পত্য সম্পর্কে নানা দায়-দায়িত্ব কিংবা হিসেবে নিকেশে জড়াতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন। অনেকেই আবার সম্পর্কে ফাটলের শঙ্কা থেকে দাম্পত্যের মতো দীর্ঘস্থায়ী কোনো বন্ধনে জড়াতে ভয় পান।
আরও পড়ুন- সৌদি থেকে ফিরলেন নির্যাতিত ১২ নারী কর্মী
এছাড়া, বিয়ে করা মানে খরচ বেড়ে যাওয়া; এই শঙ্কা থেকেও অনেক মার্কিনিদের মধ্যে বিয়ের প্রতি অনাগ্রহ বাড়ছে। এই একই কারণগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তরুণ-তরুণীদের বিয়েরে প্রতি অনাগ্রহী করে তুলছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, অনেক তরুণ-তরুণীই মনে করেন যে; বিয়ে করা মানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব হওয়া কিংবা তার নিজের ওপর অন্যের আধিপত্য বেড়ে যাওয়া। পাশাপাশি, পারিবারিক বন্ধন কমে যাওয়া, শিক্ষা ও কর্মজীবনে চাপ ও হতাশা, আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে যাওয়া, একাকীত্ব, মাদকাসক্তিসহ নানা ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ফলেও বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্করেদর মধ্যে বিয়েতে অনাগ্রহ বাড়ছে। তবে, বিয়ের প্রতি এই অনাগ্রহকে “নিউ নরমাল” তথা “নতুন স্বাভাবিকতা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে মার্কিন মনোচিকিৎসক স্টিফেন বিচেনের ভাষ্য, এই নতুন স্বাভাবিকতা মেনে নিতে হবে। আগামীতে এই প্রবণতা আরও বাড়বে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post