ওমানের সুলতান হাইসাম বিন তারেক আলে সাঈদের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে মিশরের আগ্রহকে স্বাগত জানাই। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।গত সোম ও মঙ্গলবার ইরান সফর করেছেন ওমানের সুলতান হাইসাম। এর আগে গত সপ্তাহে তিনি মিশরে যান এবং সেদেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিশরের পরপরই ইরানে আসার কর্মসূচির খবর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ওমানের সুলতান সম্ভবত তেহরান-কায়রো সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে মধ্যস্থতা করছেন। ওমান দীর্ঘ দিন ধরেই এই অঞ্চলে সফল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ইতিবাচক বক্তব্য থেকে এটা ধারণা করা হচ্ছে যে, খুব শিগগিরই তেহরান ও কায়রোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এমন সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৈনিক ‘ন্যাশনাল’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাতকার থেকেও। ঐ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মিশরের দুই জন কর্মকর্তা বলেছেন, ওমানের সুলতান ও মিশরের প্রেসিডেন্টের মধ্যে সম্প্রতি যে বৈঠক হয়েছে সেখানে তেহরান-কায়রো সম্পর্কের বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এ কারণে তারা ধারণা করছেন আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মিশর ও ইরান রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেবে।
ইরান ও মিশর হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দু’টি প্রভাবশালী দেশ। ভিন্ন মহাদেশে অবস্থিত এই দুই দেশের রয়েছে উজ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি হিসেবে খ্যাত দেশ দু’টি ধর্ম, সংস্কৃতি ও সভ্যতার দিক থেকে অনেক কাছাকাছি হলেও নানা রাজনৈতিক পরিবর্তন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানে ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার তিন মাসের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। মিশর ও দখলদার ইসরাইলের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ক্যাম্প ডেভিড’ নামের তথাকথিত শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করেছিল ইরান।
অবশ্য সে সময় বিতর্কিত ঐ চুক্তি সইয়ের অপরাধে আরব লীগ থেকেও মিশরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর মিশর ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরাকের সাদ্দাম বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। ইরান-ইরাক যুদ্ধের প্রায় দুই দশক পর মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক স্বীকার করেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা সাদ্দামকে ১৮ হাজার সেনা দিয়েছিল।
পশ্চিম এশিয়ায় এখন পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের প্রভাবে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। সৌদি-ইরান সম্পর্ককে মুসলিম বিশ্বের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। এরই ধারাবাহিকতায় ইরান ও মিশরের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হলে তা এই অঞ্চলে বিদেশি হস্তক্ষেপের মোকাবেলায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইরানের পররাষ্ট্র নীতিতে মুসলিম ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। মুসলিম ও আঞ্চলিক ঐক্যের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের শক্তি বৃদ্ধি এবং বিদেশি মোড়লিপনা বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
ওমানের সুলতানের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ঐক্যের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের অতীত গৌরব উদ্ধারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘আশা করি মুসলিম সরকারগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের মধ্যদিয়ে মুসলিম উম্মাহ তার অতীত গৌরব, সম্মান ও মর্যাদা উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। একইসঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা সব মুসলমান এবং সব মুসলিম দেশ ও সরকারের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post