এসএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাহমীনা আক্তার মীমকে। বিয়ের ১১ মাস পর স্বামী তাকে ওমানে নিয়ে যান। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে মীম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস স্বামীর সঙ্গে প্রবাসে থাকা হল না। বিদেশ যাওয়ার তিন মাসের মাথায় লাশ হয়ে ফিরতে হল তাকে। মীমের মাসহ স্বজনরা কাঁদছেন বাড়িতে আর বাবা কাঁদছেন মসজিদে।
জানা গেছে, রায়পুরে মীমকে ওমানে স্বামীর বাসায় নির্যাতন করে (বালিশ চাপা) হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শরীরে তিন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে মীমের মা ফাতেমা বেগম জানান। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আ.লীগ নেতা শামসুদ্দিন, মেম্বার জাকির হোসেন ও মো. হাসানসহ কয়েকজন সমাজপতি মেয়ের পরিবারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
তাও আবার দুই মাস পর এ টাকা দেওয়া হবে বলে জানান মেয়ের বাবা রফিক মিয়া। তবে আ.লীগ নেতা ও দুই মেম্বার বলেন, মানবিক কারণে মেয়েটির পরিবারকে দান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিহত মীম রায়পুর উপজেলার বামনী ইউপির ২নং ওয়ার্ডের ইমাম উদ্দিন হাজি বাড়ির মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. রফিক মিয়ার মেয়ে। অভিযুক্ত ফয়েজ আহাম্মদ একই ইউপির ৭নং ওয়ার্ড কাঞ্চনপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে।
সোমবার দুপুরে নিহত গৃহবধূ মীমের মা ফাতেমা ও বাবা রফিক মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ২০২২ সালের ১৬ মার্চ মীমকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন ফয়েজ। গত এক বছর ধরে ফরেজ ও তার ভাই পারভেজ ওমানের একটি শহরে গ্রিল ওয়ার্কশপের ব্যবসা করছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি মীমকে ওমান নিয়ে যান ফয়েজ। প্রায় দিনই মীম তার মা-বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললেও শেষ কথা হয় ১৬ মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে।
তারপর থেকে আর কথা হয়নি। মীম বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে ১৬ মে রাত ১০টার দিকে ফোন করে শাশুড়িকে জানান ফয়েজ। ঘটনার পর বাসা থেকে পালিয়ে যান ফয়েজ ও তার ভাই পারভেজ। পরে ওমানের পুলিশ বাসা থেকে মীমের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
সেখান থেকে ২৩ মে সকালে বাংলাদেশে মীমের লাশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাঠালে তা গ্রহণ করে উভয় পরিবার। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শ্বশুর পরিবারের লোকজন ওইদিন রাতেই বৃষ্টির মধ্যে তাড়াহুড়া করে লাশ দাফন করে। নিহতের মা ফাতেমার অভিযোগ, আমরা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভোকেটের শরণাপন্ন হয়ে চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নেওয়ায় বাড়িতে চলে আসি।
মীমকে তার দেবর যৌন নির্যাতন করতে না পেরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করতে পারে। এরপর লাশ বাসার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা হিসাবে প্রচার করে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রবাসী ফয়েজ ও তার ভাই পারভেজের মোবাইলফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
থানার ওসি শিপন বড়ুয়া জানান, গৃহবধূ মীম আত্মহত্যা করেছে ওমানে। তাই এখানে করার কিছু নেই। আদালতে মামলা করে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করাতে পারে পরিবার। এছাড়া আমাদের করার কিছুই নেই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post