রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে দুবাইয়ে পাচার হওয়া মেয়ে (১৩)কে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন তার বাবা-মা। পাচার হওয়া ওই কিশোরী নোয়াখালী সদর উপজেলার উত্তর শুল্যকিয়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে। তিনি পেশায় দিনমজুর। কাজ করেন স্থানীয় ইটভাটায় অভাবের টানাপড়েনের সংসারে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে ৭ মাস আগে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী পলি আক্তার। সামাজিকতার কথা চিন্তা করে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে নিজেরাই খোঁজাখুঁজি করেন পলির পরিবার।
কয়েকদিন পর পলি ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন বলে বাবা-মাকে ফোন করে জানান। দালালের খপ্পরে পড়ে প্রায় সাত মাস আগে দুবাই যায় পলি। সেখানে গিয়ে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পলি। দেশে ফিরতে বাড়িতে স্বজনদের ফোন দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি। এখন মেয়েকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাবা-মা। জানা গেছে, এ বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি বিদেশি নম্বর থেকে বার্তা আসে মা রহিমা বেগমের মোবাইলে।
জানতে পারেন মেয়েকে পাচারকারীরা দুবাই নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করছে। তার মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে আরও ৩০ জন মেয়ের সঙ্গে। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে নির্যাতন চালানো হয়। পলি আক্তারের মা রহিমা বেগম বলেন, স্বামীর ঘর নেই। বর্তমানে থাকি বাবার বাড়িতে। লোকলজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আমি মা হয়ে মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি তিনি যেন আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।
পলির বাবা আবুল কালাম বলেন, মেয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করতো। আমি ঠিকমতো খরচ দিতে পারতাম না। ইটভাটায় কাজ নিয়ে আমি সেখানে চলে যাই। বাড়িতে এসে দেখি মেয়ে নাই। সব জায়গায় খুঁজেও মেয়েকে পাই নাই। এখন শুনি মেয়ে দুবাইতে বন্দি আছে। সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেয়েকে নির্যাতন করতেছে। কলিজা ফেটে যায়। বাবা হয়ে কারও কাছে যেতে পারছি না।
নোয়াখালী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আবু ছালেক বলেন, কোনো এক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে মেয়েটি দুবাই চলে গেছে। কোনো কোম্পানির ভিসায় গেলে আমরা সহজেই ওই কোম্পানিকে ধরতে পারতাম। কিন্তু সে ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ায় ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যেহেতু মেয়েটাকে আটকে রাখা হয়েছে এবং সে দেশে ফিরে আসতে চায়। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদাশিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করবো।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু কিশোরী এখন বিদেশে, তাই তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে সব সহযোগিতা করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post