ভিসা জটিলতায় ১৪০ জনের হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রবিবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটের ফ্লাইটে তাদের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। তবে তখন পর্যন্ত ভিসা পাননি তারা। বর্তমানে তারা আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। জান্নাত ট্রাভেলস নামের একটি হজ এজেন্সির মাধ্যমে তাদের সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। এদিকে ট্রাভেল এজেন্সির হঠকারিতায় বিমানের ওই ফ্লাইটকে ১৪০টি আসন ফাঁকা রেখেই ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। এতে বিমান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম।
তিনি বলেন, এই যে ১৪০টি আসন ফাঁকা গেল -এ দায় নেবে কে? বিমানকে যদি অন্তত ৬/৭ ঘণ্টা আগেও এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হতো তাহলে অন্যভাবে এই আসনগুলো ভরা যেত। কিন্তু এখন কার কাছে এ কৈফিয়ত চাইব। তারপরও হজ অফিসের পরিচালককে বলেছি ওই ট্রাভেল এজেন্সিকে ডেকে ব্যাখ্যা চাইতে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এ বিষয়ে আশকোনো হজ ক্যাম্পে সরেজমিনে জানা যায়, ভিসা জটিলতায় পড়া হজযাত্রীদের অনেকেই শুক্র ও শনিবার আশকোনা হজ ক্যাম্পে এসেছেন। তবে তারা কবে সৌদি আরব যেতে পারবেন সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন। ভুক্তভোগী আজহারুল হক বলেন, আমাদের ফ্লাইট নম্বর বিজি- ৩৩১, দুপুর ২টা ২০ মিনিটে উড্ডয়নের কথা।
অথচ এখনো আমাদের ভিসা হয়নি। ট্রাভেল এজেন্সির কাছে আমাদের পাসপোর্ট রয়েছে। জান্নাত ট্রাভেলস থেকে জানানো হয়েছে, তারা সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রবেশ করতে পারছেন না। জটিলতার কারণে তারা ভিসা করতে পারছেন না। বগুড়া থেকে আসা হজযাত্রী শামসুল হক বলেন, বিমানের কাউন্টার থেকে চেকইনের জন্য ডাকা হচ্ছে। এখনো ভিসা প্রসেসিং হয়নি, হলে মেসেজ আসবে। আমাদের পাসপোর্ট, ভিসা নেই, কীভাবে যাব! তিনি বলেন, এটা এজেন্সির সমস্যা নাকি সৌদি ভিসা প্রসেসিংয়ের সমস্যা বুঝতে পারছি না। অনেক এজেন্সি ফ্লাইট পিছিয়েছে শুনেছি। এ বিষয়ে কথা বলতে জান্নাত ট্রাভেলসের পার্টনার শহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে হজ অফিস বলছে, এ ঘটনায় এজেন্সির কোনো গাফিলতি খুঁজে পাননি তারা। জানতে চাইলে হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, একটা ট্রাভেল এজেন্সির ১৪০ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। আমরা সেই এজেন্সির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কোনো গাফিলতি এখন পর্যন্ত আমাদের নলেজে নেই। উনাদের গাফিলতির কারণে ভিসা হয়নি, এমন কিছু পাইনি। একটা ভিসা করার জন্য ফরেন মিনিস্ট্রি, সৌদি আরবে যে তথ্যগুলো দিতে হয়, এজেন্সি সবই দিয়েছে। তারপরও আমরা পরীক্ষা করে দেখব, তাদের কোনো গাফিলতি কিংবা অবহেলা আছে কিনা। এখন পর্যন্ত চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভিসা যদি হয়ে যায়, এই হজযাত্রীদের পরবর্তী ফ্লাইটে তুলে যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এছাড়া অন্য ফ্লাইটগুলো ভালো মতো গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুপুরেরটায় সমস্যা হয়েছে। আমরা সৌদি দূতাবাস, তাদের আইটি টিম এবং সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যা যা করা দরকার, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে কোনো সময় ভিসাগুলো আমরা পেয়ে যাব। তবে এই ফ্লাইটে (দুপুর ২টা ২০) যেতে না পারা হাজি সাহেবদের জন্য কষ্টকর, আমাদের ব্যবস্থাপনার জন্য কষ্টকর। আমাদের জন্য অস্বস্তিকর।
ভিসার আগে টিকিট কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনা একটু জটিল। ৫টি ট্রাভেল এজেন্সির মতো না যে টিকিট করলেই চলে যাব। এখানে মদিনার বাড়ি ভাড়ার বিষয় রয়েছে। সেখানে ৮ দিন থাকতে হয়। সেটির সঙ্গে মিলিয়ে বিমানের টিকিট করতে হয় এবং হজযাত্রী নিতে হয়। তখন পর্যন্ত ভিসার আয়োজন হয় না। তার আগেই টিকিট বুকিং দিতে হয়। আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ২৬৮ জন যাচ্ছেন। আমাদের সবার কিন্তু ভিসা হয় নাই। কিন্তু সব হজযাত্রীর জন্য বিমান অ্যাসান করেছি। ভিসার সঙ্গে বিমান টিকিটের সম্পর্ক নেই। ভিসা আমাদের ওপর নির্ভর করে না। এই বিমানটি তাদের জন্য হলো না, এটি আমাদের দুর্ভাগ্য। ভিসা প্রাপ্তির পর উনাদের যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। এর ফলে বিমানের সিডিউলে কোনো সমস্যা হবে না। এ রকম ঘটনা মাথায় রেখে, এজন্য আমাদের কিছু ক্যাপাসিটি থাকেই। তাদের অন্য ফ্লাইটে পাঠাতে হবে, এতে হজযাত্রীদের বাড়তি কোনো খরচ হবে না।
হজযাত্রী আজহারুল বলেন, আমাদের ফ্লাইট নম্বর বিজি ৩৩১, দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ফ্লাইট ছিল। কিন্তু আমাদের ভিসা হয়নি। আমাদের পাসপোর্ট তাদের কাছে রয়েছে। জান্নাত ট্রাভেলস থেকে জানানো হয়েছে, তারা সৌদি অ্যাম্বাসি যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রবেশ করতে পারছে না। জটিলতার কারণে তারা ভিসা করতে পারছেন না।
সৌদি গেছেন ১৫ শ’ হজযাত্রী ॥ এদিকে বাংলাদেশ বিমানের চারটি ফ্লাইটে জেদ্দার বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন পনেরো শত হজযাত্রী। রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। জানা গেছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৭টায় প্রথম ফ্লাইটে ৪১৪ জন ও সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় ফ্লাইটে ৪১৫ জন হজযাত্রী জেদ্দায় পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ থেকে আগত এ সব হজযাত্রীদের জেদ্দা বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বাকিরা পৌঁছেছেন অন্য দুটি ফ্লাইটে।
জানা গেছে, সৌদি হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. আবদুল ফাত্তাহ বিন সুলাইমান মাশাত এ সময় বাংলাদেশী হজযাত্রীদের স্বাগত জানান।
এছাড়া জেদ্দা বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হক ও হজ মিশনের কাউন্সিলর মো. জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত হজযাত্রীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে দূতাবাস, কনস্যুলেট ও বাংলাদেশ হজ মিশন পাশে রয়েছে। হজযাত্রীদের সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ পালনের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের আওতায় এ বছর বাংলাদেশী হাজিগণ প্রথম জেদ্দায় গেলেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post