পরিবার আর আত্মীয় স্বজনদের ছেড়ে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান প্রবাসীরা। বিদেশে থাকলেও সবসময় তারা তাদের মনে ধারণ করেন বাংলাদেশকে। তাই নিজের মনের কথা বলতে প্রবাসে খুজে বেড়ায় বাঙ্গালীদেরকে। ঠিক তেমনি ওমানে বাঙালি পাড়ার আরেক নাম ‘হামেরিয়া। ইতোমধ্যেই এলাকাটি দ্বিতীয় বাংলাদেশ হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ভিড় জমে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রমিকদের।
প্রায় ৭ লাখের মতো বাংলাদেশি দেশটিতে বসবাস করছেন। পুরো ওমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এসব বাংলাদেশি। দেশটির ভেতর যে কয়টা বিভাগ রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সালালাহ, সোহার, ইবরি, ও মাস্কাট। সাধারণত মাস্কাট থেকে এই শহরগুলোর দূরুত্ব ৩০০ থেকে ১১০০ কিঃ মিঃ। কাজের জন্য বেশিরভাগ শ্রমিক থাকেন শহরের বাইরে, আবার কেউ থাকেন মরুভূমিতে। এখানে বেশিরভাগ শ্রমিকই ফ্রি ভিসার। আর তাই, তাদের কাজের নেই কোনো নিশ্চয়তা। নিজেদের কাজের সন্ধান নিজেরাই করে নেন। আর এজন্য রয়েছে প্রসিদ্ধ এক জায়গা, যার নাম হামরিয়া। রাজধানী মাস্কাট এর রুইতে অবস্থিত।
হামরিয়াকে ওমানিরা বলে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। কারণ ওখানকার ৮০ শতাংশ লোকই বাংলাদেশি। ওমানে অবস্থানরত বেশিরভাগ শ্রমিকই এখানে রুম নিয়ে রাখেন। বিশেষ করে যারা ফ্রি ভিসার। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন কোম্পানির জন্য শ্রমিক নিতে আসেন। অনেকটা আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জের হাটের মতোই।
ছোট একটা ব্যাগ নিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝখানে উঁচু যায়গায় দাঁড়িয়ে যার শ্রমিক দরকার সে বলতে থাকে। এভাবে দরদাম করে এখান থেকে প্রতিনিয়ত শ্রমিকরা কাজে যোগদান করে বিভিন্ন পেশায়। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই এলাকাটা ঢাকার গুলিস্তানের রূপ ধারণ করে।
দেখলে বোঝায় যাবে না এটা কি ওমান নাকি বাংলাদেশ। কারণ মাস্কাট এর বাহিরে যেসব শ্রমিক কাজ করেন তারা শুক্রবার আসেন পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করতে এবং ভালো কাজের সন্ধানে। এজন্য আবার প্রায় শুক্রবার সন্ধ্যার পর পুলিশের চেকিংও হয়ে থাকে। যদি কেউ বুঝতে পারে পুলিশ আসছে, সে এমন এক সংকেত দেয় যাতে অন্যসব বাঙালিরা বুঝতে পেরে যে যার মতো এদিক-সেদিক পালিয়ে যায়।
এর মাঝে অনেকে ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। যারা পুলিশের হাতে আটক হয় তাদের বেশিরভাগ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অন্যথায় জেল খাটতে হয়, আর যাদের আরবাব (ওমানি স্পন্সরকে আরবাব বলে) ভালো, তাদের ওমানি স্পন্সর থানায় গিয়ে জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
আপনজন ছেড়ে প্রবাসে এভাবেই প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যান বেশিরভাগ শ্রমিক। অথচ পরিবারের মানুষ মনে করে বিদেশ মানেই টাকা আর টাকা। যখন চাইবে হুট করে গাছ থেকে টাকা ছিঁড়ে দিবে। কিন্তু এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কিভাবে থাকেন এবং কেমন কাটে তাদের বিদেশ জীবন, এটা একমাত্র প্রবাসীরা-ই বুঝেন। কেউই তাদের দুঃখ বুঝতে চায়না, সবাই শুধু রেমিট্যান্সের হিসেব গুনে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post