হবিগঞ্জের জাহেদা খাতুন বড় মেয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ৯ বছর ধরে। চলতি বছর পবিত্র হজে যাবেন বলে ১০ মে দেশে ফেরেন তিনি। মাকে নিতে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন একমাত্র ছেলে নুরুল গাজী, তাঁর মেয়ে ও দুই আত্মীয়। তাঁরা আসেন হবিগঞ্জ থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে।
জাহেদা খাতুন বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর রাত পৌনে তিনটার দিকে তাঁরা ওই মাইক্রোবাসে বাড়ি ফেরার পথ ধরেন। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় ৩০০ ফিট সড়কের অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে পৌঁছানোর পর চালক গাড়ি থামিয়ে প্রস্রাব করতে যান। তখন সময় রাত ২টা ৫৫ মিনিট। হঠাৎ সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস নুরুলদের গাড়ির সামনে আসে। মুখোশ পরা চার থেকে পাঁচজন ওই গাড়ি থেকে নামেন। তাঁদের সবার হাতে চাপাতি। হত্যার হুমকি দিয়ে তাঁরা মুঠোফোন, স্বর্ণালংকারসহ ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিনিয়ে নেন।
তবে জাহেদা খাতুন তাঁর ছোট্ট ব্যাগটি দিতে রাজি হচ্ছিলেন না, তখন ডাকাত দলের সদস্যরা তাঁর মাথায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নুরুল গাজী গত রোববার রাতে বলেন, ‘৩০০ ফিটে যখন গাড়ি থামান চালক, তখন আমি জিজ্ঞাসা করি, কেন গাড়ি থামালেন? তখন তিনি বলেন, প্রস্রাব করবেন। এর কিছুক্ষণ পর আরেকটি মাইক্রোবাস আমাদের গাড়ির সামনে এসে ব্যারিকেড দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সশস্ত্র ডাকাতরা আমাদের কাছে থাকা মালামাল লুট করে নেন। কিন্তু ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দিলে হঠাৎ চাপাতি দিয়ে মায়ের মাথায় কোপ দেন। তখন মা অজ্ঞান হয়ে যান।’
নুরুল গাজী জানান, ডাকাতেরা চলে যাওয়ার পর সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় করে মাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান। তখন জ্ঞান না ফেরায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের জ্ঞান ফেরে। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জে ছেলের বাসায় অবস্থান করছেন।
ডাকাতির সময়ের বর্ণনায় নুরুল গাজী বলেন, ‘গলায় চাপাতি ধরে ডাকাতরা হত্যার হুমকি দিয়ে বলতে থাকেন, “চিৎকার করলে কল্লা ফেলাই দিমু।” পরে আমরা আর ডাকাতদের বাধা দিইনি।’
এ ঘটনায় নুরুল গাজী হবিগঞ্জ থেকে ভাড়া করা মাইক্রোবাসের চালক আরব আলীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ডাকাতদের আসামি করে খিলক্ষেত থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় চালক আরব আলীকে গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে খিলক্ষেত থানার পুলিশ।
ডাকাতিতে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে গাড়িচালক আরব আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে উল্লেখ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুধাংশু সরকার বলেন, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি শনাক্তের জন্য ঘটনাস্থল ও বিমানবন্দর এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ডাকাতদের পরনে ছিল ছাপার খাকি রঙের শার্ট ও প্যান্ট। মুখে ছিল মুখোশ। চোখ ও কপালে কালো কালির দাগ ছিল। ৩৫ মিনিট ধরে ডাকাতি চলে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাহেদা খাতুনের একটি আইফোন, চারটি স্যামসাং ফোন, তিন জোড়া কানের দুল, তিন জোড়া সোনার বালা, একটি স্বর্ণের আংটি, দুটি লাগেজভর্তি মালামাল লুট হয়েছে। এসবের মূল্য সাড়ে ২০ লাখ টাকা।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহান হক।
আরো দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post