মার্কিন ডলারের একাধিপত্য রোধে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকস-এ আরও ২৫ দেশ যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য তাদের নতুন মুদ্রা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নয়, সম্প্রসারিত ব্রিকস জোটের মুদ্রা মার্কিন ডলারকে বৈশ্বিক রিজার্ভ ব্যবস্থা থেকেও সরিয়ে দিতে যাচ্ছে বলে জোর গুঞ্জন। খবর: ব্লুমবার্গ।
যদি এতগুলো দেশ ডলার ত্যাগ করে এবং একটি নতুন মুদ্রা দিয়ে আন্তঃসীমান্ত লেনদেন শুরু করে, তবে তা হবে মার্কিন ডলারের ওপর একটি বড় আঘাত। এতে বিশ্বব্যাপী দুর্বল হতে পারে ডলার এবং এর ঘাটতি পুনরুদ্ধার করার কোনও উপায় খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
শিগগিরই প্রকাশিত হতে যাওয়া ‘ব্রিকস মুদ্রা’ আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের আধিপত্য খর্ব করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে তেল সমৃদ্ধ দেশও রয়েছে। তারা ডলারের পরিবর্তে ইউরোপীয় দেশগুলোকে তেলের জন্য নতুন মুদ্রা দিয়ে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে। আর এটি ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্রের এই মুদ্রা ব্যতীত বিশ্ববাজারে বাণিজ্য করা প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘হার্ড কারেন্সি’। আন্তর্জাতিক দেনা-পাওনা মেটানোর মুদ্রা ছাড়াও এটি সবচেয়ে প্রচলিত ‘রিজার্ভ কারেন্সি’। ডলারের এই একাধিপত্য থেকে পরিত্রাণের জন্য এবার একাট্টা হতে যাচ্ছে ৩০ দেশ। তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদীয়মান অর্থনৈতিক জোট ‘ব্রিকস’ এর মুদ্রা গ্রহণ করতে চায়।
এ বছরই জোটটি প্রসারিত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জোটে আরও দেশের যোগদানের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি আগামী আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনে নেওয়া হতে পারে। এক ডজনেরও বেশি দেশ ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ও অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে বলে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২৫টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নতুন মুদ্রা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। জোটে যোগ দিতে আগ্রহ দেখানো দেশগুলো হল: আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেলারুশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাজাখিস্তান, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সেনেগাল, সুদান, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা-এই পাঁচটি দেশ নিয়ে মূলত ব্রিকস গঠিত। এর সঙ্গে আরও ২৫ দেশ যোগ দিলে এই জোট ৩০ দেশে সম্প্রসারিত হবে। সম্প্রসারণের পরে জোট আরও শক্তিশালী হবে, কারণ তাদের জিডিপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। এটি ডলার ও ইউরোসহ অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিশালী মুদ্রাকে পেছনে ফেলতে পারে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো মার্কিন ডলারের ওপর তাদের নির্ভরতা শেষ করতে চায়। এবং শিগগিরই প্রকাশিত হতে যাওয়া ‘ব্রিকস মুদ্রা’ আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের আধিপত্য খর্ব করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুতরাং এটা বলা যায়, ব্রিকস আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে একটি নতুন বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার সূচনা করার জন্য বর্তমানে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post