কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রবাসীর স্ত্রীসহ সন্তানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ইতালি প্রবাসী মো. ফরহাদ আহমেদের স্ত্রী জোনাকী বেগম (২৭) ও তার সন্তান আলিফ (৪) বসতঘরে একই সময়ে রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের সম্ভুপুর গ্রাম থেকে তাদের ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন গৃহবধূর শাশুড়ি ও প্রতিবেশীরা।
তবে হাসপাতালে লাশ রেখে শাশুড়ি বেবী বেগম ও তার লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। নিহতের স্বজনদের দাবি নিহত গৃহবধূর শাশুড়ি ননদের মানসিক নির্যাতনে জোনাকী বেগম এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
জানা গেছে, ভৈরবের সম্ভুপুর গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে ফরহাদ আহমেদ দীর্ঘদিন যাবত ইতালি প্রবাসী। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর ছয় বছর আগে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার রইছ মিয়ার মেয়ে জোনাকী বেগমকে বিয়ে করেন ফরহাদ। বিয়ের পর তার একটি ছেলেসন্তান হয়।
স্বামী ফরহাদ ইতালিতে থাকলেও তার স্ত্রী ভৈরবের বাড়িতে শাশুড়ির সঙ্গে বসবাস করতেন। স্বামীর পাঠানো টাকা-পয়সা, গহনা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রায়ই শাশুড়ি বেবী বেগমের সঙ্গে ঝগড়া হতো বলে জোনাকীর মায়ের দাবি। দুদিন আগেও বউ শাশুড়ির ঝগড়া হয় টাকা নিয়ে।
প্রতিবেশী ও স্বজনদের ধারণা, জোনাকী প্রথমে তার সন্তানকে ফাঁসিতে ঝোলান এবং পরে তিনি নিজে ফাঁস দেন। পরে শাশুড়ি ঘটনা দেখে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দুজনকে রশি থেকে নামিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত নিয়ে আসেন। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার দুজনকেই মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে জোনাকীর বাবার বাড়ির স্বজনরা ঘটনাস্থল হাসপাতালে এসে দুটি লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহত জোনাকী বেগমের মা ছালেহা বেগম অভিযোগ করে বলেন, শাশুড়ি বেবী বেগমের অত্যাচার মানসিক নির্যাতনে আমার মেয়ে তার সন্তানসহ এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। স্বামীর পাঠানো টাকাপয়সা গহনা নিয়ে প্রায়ই দুজনের মধ্য ঝগড়া হতো। দুদিন আগেও আমার মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে তার শাশুড়ি। আমরা থানায় মামলা করব, আমি আমার মেয়ে ও নাতির মৃত্যুর বিচার চাই।
নিহতের বড় বোন ঝরনা বেগম জানান, ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হাসপাতালে দুটি লাশ রেখে শাশুড়ি পালিয়ে গেছেন। শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার হয়ে আমার ছোট বোন এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, মৃত্যুর দুই ঘণ্টা আগেও আমার বোন শাশুড়ির নির্যাতনের কথা ফোনে আমাকে বলেছে। জোনাকী এইসএসসি পাশ ছিল, শিক্ষিত মেয়ে। প্রতিবেশী জহির মিয়া বলেন, জোনাকী খুব ভালো মেয়ে ছিল। মা-ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা হতবাক হয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নওরীন ফাতেমা সুরভী জানান, আমরা দুজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। দুজনের গলায় বড় ধরনের দাগ আছে আমরা দেখেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হবে বলে তিনি জানান।
ভৈরব থানার এসআই মো. জিন্না জানান, খবর পেয়ে পুলিশের দল নিয়ে আমি দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে ছুটে এসে দুটি লাশ দেখি। পরে লাশগুলোর সুরুতহাল তৈরি করেছি। দুজনের গলায় দাগ রয়েছে। কেন, কি কারণে মা-ছেলে একসঙ্গে আত্মহত্যা করল তা তদন্ত করে উদঘাটন করা হবে। নিহতের পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে আমরা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
এদিকে নরসিংদীর রায়পুরায় রোমা আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত রোমা আক্তার রায়পুরা পশ্চিমপাড়া এলাকার আজমত আলীর মেয়ে এবং শ্রীনগর এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে দুবাই প্রবাসী সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী। ১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
জানা যায়, মৃতের শিশু সন্তান রাকিবুল বাড়িতে এসে শোবার ঘরে গিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে তার মায়ের দেহ ঝুলে থাকতে দেখে। সে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। তারা এসে ঝুলন্ত দেহ নিচে নামিয়ে দেখে বুক ধরফর করছে। ডাক্তারের কাছে নেয়ার আগেই মারা যায়।
মৃতের মা নুরুন্নাহার বলেন, আমার মেয়ে হরমোনজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ ছিল। খবর পেয়ে রায়পুরা থানার এসআই বাপ্পি কবিরাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে মর্গে পাঠায়। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post