বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ক্রমশ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। ফলে দেশের চারটি বন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে উচ্চ জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছে সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চল। সবচেয়ে বেশি জুঁকিতে রয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। অন্তত ২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়তে পারে দ্বীপটি।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোনে রুপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। ঘণ্টায় ঝড়ের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটারের বেশি থাকলে সেটিকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়। মোখা উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার। শুক্রবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেয়।
এতে দেশের চার বন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়। এর অর্থ হলো বন্দরগুলো ঘূর্ণিঝড় কবলিত হতে পারে। এখন প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার সময়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
মার্কিন নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের মতে ঘূণিঝড়ের গতিপথঅতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে সমুদ্রে ২৮ ফুট উচ্চতার ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছেআবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ‘মোখার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস শুরু হতে পারে। তখন থেকে ওইসব এলাকায় এর প্রভাব শুরু হবে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বইবে দমকা বাতাস। পরদিন রবিবার উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
শুক্রবার দুপুর চারটার দিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক ঢাকা টাইমসকে বলেন, রবিবার দুপুর নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল দিয়ে ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল দিয়ে মোখার অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা পুরোটাই এ মোখার আওতায় থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ‘মোখা’ সিডরের মতো আই ফরমেশন বা চোখাকৃতির দিকে এগোচ্ছে। এখন পর্যন্ত ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এছাড়া রয়েছে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়া।
তিনি জানান, সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৭ হলে তাকে বলা হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর বাতাস যদি ১১৭ থেকে ২২০ কিলোমিটার বেগে বয়, তবে তা হয় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের মতে ঘূর্ণিঝড়েরর গতিপথআবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। ‘মোখা’র প্রভাবে আজ থেকে সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। শনিবার থেকে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে।
এদিকে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ এক ফেসবুক পোস্টে জানান, আমেরিকার নৌবাহিনীর কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার বলেছে, মোখার গতিবেগ ঘণ্টায় ২২১ কিলোমিটারের বেশি হতে পারে। যার অর্থ এটি সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে। মার্কিন এই ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড়টি ইতোমধ্যে সমুদ্রে ২৮ ফুট উচ্চতার ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post