বেপরোয়া হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কারণে বৈধপথে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যে কারণে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করেও প্রত্যাশিত প্রবাসী আয় দেশে আসেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুর দিকে প্রবাসী আয় প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করলেও দুই মাস পরই তা ১৫০ কোটির ঘরে নেমে আসে। জুলাই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২০৯ কোটি ডলার হলেও পরের মাস থেকেই কমতে থাকে।
আগস্টে প্রবাসী আয় ৬ কোটি ডলার কমে ২০৩ কোটি ডলারে নেমে আসে। সেপ্টেম্বর মাসে গিয়ে বড় ধাক্কা খায় প্রবাসী আয়ে। ওই মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছিলেন আগের মাসের তুলনায় ৫০ কোটি ডলার কম বা ১৫৩ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন: হুন্ডি কী বা হুন্ডি কাকে বলে ?
অক্টোবরে আরও কমে ১৫২ কোটি ডলার হয়। তবে নভেম্বর মাসে আবার কিছুটা বাড়ে প্রবাসী আয়। ওই মাসে ৭ কোটি ডলার বেড়ে ১৫৯ কোটি ডলার দেশে আসে। ডিসেম্বরে আরও ১০ কোটি ডলার বেড়েছিল। প্রবাসীরা ১৬৯ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিল। টানা ছয় মাস পতনের পর চলতি বছরের শুরুতে আবার বাড়ে রেমিট্যান্স।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৫ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। তবে ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে আবার হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এতে আবারও দেড় শ কোটি ডলারের ঘরে নামে প্রবাসী আয়। ওই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসে ১৫৬ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়।
তবে পরের মাস মার্চে প্রবাসী আয় আবার ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিল ঈদুল ফিতরের কারণে এপ্রিল মাসেও চাঙা থাকবে প্রবাসী আয়। কিন্তু হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দেওয়া উচ্চ রেটের কাছে হেরে যান প্রবাসীরা।
আরও পড়ুন: ম্যাসেজে চলছে হুন্ডির রমরমা ব্যবসা, ডুবছে দেশ
হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৬৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ঈদের মাস এপ্রিলে প্রবাসী আয় আগের মাসের চেয়ে কমে গেছে প্রায় ১৭ শতাংশ বা ৩৩ লাখ ডলার। অথচ এর আগের মাস মার্চে দেশে এসেছিল ২০১ কোটি ডলার প্রবাসী আয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে ডলারের হুন্ডি ব্যবসায়ীরা দাম ব্যাংকের চেয়ে বেশি দিচ্ছে। যে কারণে ঈদের সময়ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গেছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করতে হবে।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ প্রতি ডলার ১০৮ টাকা দরে প্রবাসী আয় কিনতে পারছেন। প্রবাসী আয়ের ডলারের এই দর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল ১০৭ টাকা।
আরও পড়ুন: হুন্ডি ঠেকাতে রেমিট্যান্স মোবাইল ব্যাংকে
অন্যদিকে কার্ব মার্কেটে বা হুন্ডিতে ডলারের দাম প্রায় ১১০ টাকা। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে প্রতি ডলারে ৩ টাকা বেশি পাওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে ডলার পাঠাতে আগ্রহী হয়েছে।
এ বিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আগের চেয়ে অনেক বেশি বাড়বে বলে আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেটা হয়। হুন্ডির কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কম এসেছে। হুন্ডি কমিয়ে আনতে পারলে অবৈধ চ্যানেলে টাকা আসা বন্ধ করা যাবে।
হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটি থেকে এসেছে ২৮০ কোটি ডলার।
পরবর্তী অবস্থানে থাকা সৌদি আরব থেকে এসেছে ২৭৩ কোটি ডলার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মানুষ অনেক বেশি গেলেও আয় অনেক কম এসেছে।
অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে হলে ডলারের ব্যাংক রেট এবং কার্ব মার্কেটের রেট ম্যাচ করে দিতে হবে। দামের পার্থক্য থাকলে হুন্ডি বন্ধ করা অনেক কঠিন।
জানা গেছে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি কাজ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালেই গেছেন ১১ লাখের বেশি বাংলাদেশি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post