সম্প্রতি অর্থকষ্ট, কর্মস্থলে ছুটি না পাওয়া ও পারিবারিক নানা চাপে ভুগছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, ফলে বাড়ছে হৃদরোগ। আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকে।
প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখেন। তারা চাইলেই খুব একটা দেশে ফেরার সুযোগ পান না। অর্থকষ্ট কর্মস্থলের ছুটি না পাওয়া ও পারিবারিক নানান চাপে পড়ে দীর্ঘ সময় প্রবাসে অবস্থান করেন বেশিরভাগ প্রবাসীরা। কখনও কখনও এতে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়।
চট্টগ্রামের মোহাম্মদ হাসান ১৭ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে আছেন। কাজ করছেন একটি সাইকেল মেরামতের দোকানে। তার মতো অনেকেই দীর্ঘসময় রয়েছেন বিদেশের মাটিতে। নানা চাপে প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়ে হৃদরোগ ও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হার বাড়ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি বাংলাদেশ মিশনের তথ্য মতে, গত এক বছরে মারা গেছেন ৭০৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশী। এর মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৪৬৪ জন। অনাকাঙ্খিত মৃত্যু হয়েছে অনেকের। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে না পারা ও অসতর্কতায় এমন মৃত্যুর কারণ বলছেন ডা. আব্দুল গফুর।
জেবেল সিনা মেডিকেল সেন্টার আজমান ডা. আব্দুল গফুর বলেন, পরিবার ছাড়া প্রবাসীরা প্রবাসে থাকছে। সেজন্য তারা বিভিন্ন ধরনের মানসিক টেনশন নিচ্ছে। টেনশনের কারণে অনেক সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়।
রক্তচাপ বেড়ে গেলে তারা তখন সেই রকম ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে না। তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ট্রিটমেন্ট করে ফেলছে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা প্রপার টিটমেন্ট পাচ্ছে না। ফলে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকে।
প্রবাসীদের মৃত্যুজনিত ক্ষতি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক বকেয়া থাকলে স্থানীয় আইন অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। মিশনের তত্ত্বাবধানে গত এক বছরে মামলায় অন্তত সাড়ে ২৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে। যা ভুক্তভোগী প্রবাসী পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে মিশন।
শুধু ২৪ জন প্রবাসীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি ও ৯২ জনের প্রাতিষ্ঠানিক বকেয়া উত্তোলন হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। আবুধাবিতে ৪৪ জন মৃত প্রবাসীর এমন ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাই লেবার কাউন্সিলর ফাতেমা জাহান বলেন, শুধু দুবাই ও উত্তর আমিরাতে গেল ৪ বছরে ১১০ জন প্রবাসীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
কর্মস্থলে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর চেয়েও ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রবাসীদের এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়েছে বলছেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন।
তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সুস্থ করার কথা বলছেন এই কর্মকর্তা।
বিদেশে চিকিৎসার ব্যয় বেশি হওয়ায় বহু প্রবাসী দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত থাকলেও কোনো চিকিৎসা নেন না। দেশে ফিরে চিকিৎসা নিতে গেলে সর্বস্ব হারান অনেকে। এমন অবস্থায় প্রবাসীদের জন্য দেশে চিকিৎসা সেবা সহজ করা ও বীমা চালু করা প্রত্যেকের জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন প্রবাসীরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post