অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রিয়া। মায়ের মোবাইল ফোনে আসাদুল নামের এক স্থানীয় ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হতো তার। ভিডিও কলে কথা বলার বিষয়ে তার মা’কে বলে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসাদুল ওই ছাত্রীকে নগ্ন হয়ে ভিডিও কল দেয়ার কথা বলে। পরে ওই শিক্ষার্থী নগ্ন হয়ে ভিডিও কলে কথা বললে তা রেকর্ড করে রাখে আসাদুল।
এরপর ওই ভিডিও মেয়ের মা’কে দেখিয়ে একদিনের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দেয়া না হলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয় আসাদুল।
বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগীর মা লজ্জায় ব্যাটারির এসিড পানি পান করে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার চারদিন পর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটে বরগুনার তালতলী উপজেলায়। বর্তমানে অনলাইনে অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে।
হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়েও দেয়া হচ্ছে। প্রেম, কিংবা বন্ধুত্বের সুযোগে এসব আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ধারণ করছে অপরাধারীরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসবের ভুক্তভোগী হচ্ছেন উঠতি বয়সী তরুণীরা।
ডিএমপি’র তথ্য বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে ৩৯৬টি। যা প্রতি বছরই পর্যায়ক্রমে বেড়েছে। অর্থাৎ ২০২০ সালে মামলা হয় ৮৮টি, ২০২১ সালে ১১৭টি এবং ২০২২ সালে ১৭২টি। এবং চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে হয় ১৯টি মামলা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অসতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করার কারণে পর্নোগ্রাফি ও অনলাইন হ্যারেসমেন্টের শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তারা অপরিচিত মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অল্প পরিচয়েই সখ্যতা গড়ে তোলেন।
বিভিন্ন ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান করেন। ভিডিও কলে কথা বলেন। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে আপত্তিকর ভিডিও আদান-প্রদান করেন কিংবা ভিডিও কলে আপত্তিকর অবস্থায় কথা বলেন।
তখন অপর পক্ষ এগুলো রেকর্ড বা সংরক্ষণ করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও আপত্তিকর ভিডিও আদান-প্রদানের পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হলেও সেগুলো ছড়িয়ে দেয়।
ডিবি সূত্র অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ৩৩ মাসে মোট ৪৪৩টি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। এরমধ্যে ৭৮টি মামলাই পর্নোগ্রাফি ধারণ ও অনলাইন হ্যারেসমেন্টের অভিযোগে।
যা মোট মামলার ১৭.৬০ শতাংশ। ডিবি’র তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালে (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্নোগ্রাফি ধারণ ও অনলাইন হ্যারেসমেন্ট অভিযোগে মামলার হার ছিল ১৯.০৪ শতাংশ, ২০২১ সালে ১৪.০৭ শতাংশ, ২০২২ সালে ২০.৪৬ শতাংশ এবং চলতি বছর (জানুয়ারি-মার্চ) তা দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ মানবজমিনকে বলেন, পর্নোগ্রাফি ধারণ ও অনলাইন হ্যারেসমেন্টের অভিযোগে যেসব মামলা আসে তার অধিকাংশের ভুক্তভোগী নারী।
বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। তারা অনলাইনে বিভিন্ন অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও অপর পক্ষের কাছে শেয়ার করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন।
এ ছাড়া মোবাইলে অনেক সময় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও থাকা অবস্থায় তা অসতর্কতাবশত যে কারও হাতে চলে যেতে পারে। কিংবা ফেসবুকে কারও সঙ্গে এসব ছবি, ভিডিও শেয়ার করার পর সেই আইডি হ্যাক হলেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পর্নোগ্রাফি ও অনলাইন হ্যারেসমেন্ট থেকে সুরক্ষায় সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কখনোই আপত্তিকর ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান করা উচিত নয়।
অল্প পরিচয়েই কারও সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া যাবে না। নিজের মোবাইলেও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কেউ হ্যারেসমেন্টের শিকার হয় তাহলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিবে। আমরা অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনবো।
সূত্র: মানবজমিন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post