ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ায় কয়েক প্রজন্ম ধরে ছোট্ট একটি কোরআন সংরক্ষণ করছে একটি পরিবার। আকারে মাত্র ২ সেন্টিমিটারের কোরআনটি ১৯ শতকের হবে বলে জানিয়েছেন এক গবেষক। বর্তমানে এই কোরআনটি সংরক্ষিত আছে মারিও প্রুসি নামের এক ব্যক্তির কাছে। আলবেনিয়ার তিরানা শহরে বসবাস করেন মারিও। সেখানেই বার্তাসংস্থা এপির সঙ্গে ছোট্ট এ কোরআনটি নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এটি সংরক্ষণ করেছি।
১০০ বছর পুরোনো এ কোরআনটি তৈরির পর আলবেনিয়ায় সংঘটিত হয়েছে যুদ্ধ। বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে শাসকের। তবে এতসব কিছুর পরও এটি এখনো অক্ষত আছে। ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের ধারণা, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোরআনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। কোরআনটি রুপার একটি বাক্সের মধ্যে রয়েছে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে রুপার রঙও কালো হয়ে গেছে।
কোরআনটি এতটাই ছোট যে এটি পড়তে ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাসের প্রয়োজন হয়। যা রুপার বাক্সের সঙ্গেই যুক্ত আছে। এই কোরআনটি ঠিক কতটা পুরোনো সেটি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এল্টন কারাজ নামের এক কোরআন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, লেখার ধরণ দেখে বোঝা যায় এটি ১৯ শতকের শেষ দিকে তৈরি করা হয়েছিল।তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরআন শিক্ষার গবেষক এল্টন কারাজ বলেছেন, ‘এই কোরআনটি খুবই ছোট ফরমেটে প্রিন্ট করা হয়েছিল, বিশ্বের অন্যতম ছোট। এটি দেখে যা বোঝা যায়, কোরআনটি প্রকাশের সময় ১৯ শতকের শেষ দিকে। এটি একটি অসাধারণ কাজ, খুবই মূল্যবান। খুবই ভালো বিষয় হলো এটি আলবেনিয়ায় রয়েছে।
তবে এ কোরআনটি শুধুমাত্র আকারে ছোট হওয়ার জন্যই বিশেষ নয়। এই কোরআনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বিষ্ময়কর ইতিহাস। বর্তমানে যে মারিও প্রুসির কাছে কোরআনটি আছে, সেই মারিওর পরিবার ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। কসোভোর জোকোভিকা অঞ্চলে মাটি খুঁড়ার সময় তার প্রো-পিতামহ অক্ষত অবস্থায় একটি মরদেহ খুঁজে পান। সেই মরদেহের ওপর ছিল কোরআনটি। এটি পাওয়ার পর তার প্রো পিতামহ ক্যাথলিক থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন।
মারিও প্রুসির দাদা ১৯৩০ সালের দিকে আলবেনিয়ার রাজা ঝোগের সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। সেই সুবাদে তিনি আরবি পড়তে পারতেন। তিনি প্রতি রাতে বন্ধুদের ডেকে কোরআনটি থেকে বিভিন্ন আয়াত পড়তেন। এর কয়েক বছর পর আলবেনিয়ায় আসে কমিউনিস্ট শাসন। কমিউনিস্ট নেতা এনভার হোক্সা পুরো দেশে ধর্ম চর্চা নিষিদ্ধ করেন। যারা ধর্ম পালন করতেন তাদের জেলে ঢোকাতেন তিনি। এছাড়া সকল ধর্মীয় স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ কোরআনটি আকারে অনেক ছোট হওয়ায় এটি সহজেই মারিওর দাদা লুকিয়ে ফেলেন।
পরবর্তীতে কোরআনটিকে অক্ষত রাখতে মারিওর বাবা এটি লুকিয়ে পার্শ্ববর্তী কসোভোতে নিজের বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৯৯৯ সালে কসোভো যুদ্ধের পর এটি তিনি আবার ফিরে পান। ২০১২ সালে বাবার মৃত্যুর পর পবিত্র গ্রন্থটি সংরক্ষণের দায়িত্ব পান মারিও। ছোট ও দেখতে অন্যরকম হওয়ায় অনেকে এটি মারিওর কাছ থেকে কিনতে চেয়েছেন। এছাড়া জাদুঘরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি জানিয়েছেন, কখনো এটি অন্য কাউকে দেবেন না তিনি।
আরো দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post