ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছিল বিভিন্ন পার্ক থেকে শুরু করে উন্মুক্ত স্থান। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে সব বয়সের মানুষের ঢল নেমেছিল শহরজুড়ে। শিশুমেলা, চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর হাতিরঝিলসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলো সকালে একটু ফাঁকা হলেও বিকেল ও সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
রাজধানীবাসীর বিনোদনের প্রধান কেন্দ্রস্থল মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। এদিন চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এদিন প্রায় এক লাখ মানুষের আগমন ঘটেছে। তাতে রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছেন অগণিত দর্শনার্থী। বেশির ভাগই এসেছেন পরিবারসহ, আবার কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধবের সাথে।
জানা যায়, বর্তমানে চিড়িয়াখানায় বাঘ আছে ১৩টি, সিংহ আছে সাতটি, হাতি আছে পাঁচটি ও জিরাফ আছে সাতটি। এ ছাড়া জেব্রা আটটি, জলহস্তি ১৩টি, ক্যাঙ্গারু দুটি, ভাল্লুক চারটি, হায়েনা তিনটি ও গণ্ডারের সংখ্যা একটি। এসব প্রাণীর মধ্যে বাঘ-সিংহের খাঁচার সামনেই শিশু দর্শনার্থীর ভিড় ছিল বেশি।
ঈদের দিন বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয় চিড়িয়াখানা এলাকায়। সারাদিনই ছিল রোদের উত্তাপ। সকালে ভিড় কিছুটা কম থাকলেও দুপুরের পর দর্শনার্থীর চাপ বাড়তে থাকে। দর্শনার্থী টানতে সনি সিনেমা হলের সামনে অন্য রুটের বাসগুলোকেও চিড়িয়াখানার যাত্রী নিতে দেখা যায়। খেলনা, ময়ূরের পেখম, মুখোশ, খাবার নিয়ে চিড়িয়াখানা সংলগ্ন ফুটপাথে হকারদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় হাতির ঝিল। ৩০২ একর আয়তনের এ ঝিলটি ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, ফার্মগেট, কাওরান বাজার ও মগবাজারকে সড়ক এবং নৌপথে যুক্ত করেছে। ঈদের দিন সেখানেও ভিড় করেছেন দর্শনার্থীরা। বিকেল হতেই ঝিলপাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যা তা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। অনেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হেঁটে বেড়িয়েছেন।
হাতিরঝিলের পুলিশপ্লাজা, মধুবাগ ব্রিজ, রামপুরা অংশে ভিড় বেশি দেখা গেছে। এছাড়া অন্যান্য ওভার ব্রিজ ও ফুট ওভার ব্রিজে প্রচুর লোকজন ছিলেন। চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ‘গতবারের তুলনায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। গত বছর ঈদের দিন ৬০ হাজারের মতো দর্শনার্থী এসেছিলেন। এবার তা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এদিন সকাল থেকেই দর্শনার্থী এসেছেন, দুপুরের পর থেকে তা বাড়তে থাকে।
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ভ্রমণপিপাসুদের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটন ও বিনোদন স্পটগুলোতে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সোনারগাঁওয়ের পর্যটন ও বিনোদন স্পটগুলোতে ঈদের দিন থেকে টানা ৩ দিন ধরে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা থেকে আসা বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত ছিল বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁও জাদুঘর),পানাম নগরী, বাংলার তাজমহল ও পিরামিডসহ সোনারগাঁওয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো।
সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলার তাজমহল ও পিরামিড, ঐতিহাসিক পানাম নগরী, বারদীতে জ্যোতিবসুর জাদুঘর, বৈদ্যেরবাজার মেঘনা নদীর ঘাট, কাইকারটেক, অলিপুরা, হরিহরদি ব্রিজ এলাকা, দ্বিতীয় মেঘনা সেতুসহ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়। এসব বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশুদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সোনারগাঁও জাদুঘর ও ঐতিহাসিক পানাম নগরী। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে প্রতœতত্ত্ব কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
এদিকে পানাম নগরী ও জাদুঘরসহ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের চাপে বিনোদন কেন্দ্রের আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে গাড়ি ছেড়ে হেঁটে দর্শনার্থীরা বিনোদন কেন্দ্রে ছুটছেন। জানা যায়, এ বছর ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা ৩ দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল প্রকৃতির সাথে কিছু সময় আনন্দে কাটিয়ে খুশি আগত দর্শনার্থীরা। এবার দর্শনার্থীরা দেখছেন, মিশরের পিরামিড আদলে নির্মিত বাংলার পিরামিড। রঙ-বেরঙের পোশাক পরিহিত অনেক দর্শনার্থী ফাউন্ডেশন চত্বরের লেকে প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে নৌকা দিয়ে বেড়ানোর মাধ্যমে এ ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন।
শিশু-কিশোররা নাগর-দোলায় দোল খেয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেছেন। দর্শনাথীদের উপস্থিতির কারণে ঈদের দিন থেকেই লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলার তাজমহল ও পিরামিড খোলা রাখা হয়। জাদুঘর প্রাঙ্গণে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মিত ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি উঠাতে ব্যস্ত ছিলেন যুবকরা। এ ছাড়া বড় সর্দার বাড়ির অপূর্ব কারুকার্য মোহিত করে দর্শনার্থীদের। সবচেয়ে বেশি ভিড় করেন বড় সর্দার বাড়ির প্রবেশমুখে। এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা সব কিছু মিস করলেও বড় সর্দার বাড়ির প্রবেশমুখে ছবি তুলতে ভুলে না। আগত দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘরের ভেতর বৈশাখী মেলাও উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা। মেলায় জামদানী শাড়ীসহ নানা ধরনের হস্তশিল্প সামগ্রী কেনাকাটা করতে দেখা গেছে তাদের। আগত দর্শনার্থীরা জানান, জাদুঘর আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। জাদুঘরে প্রবেশ মুখের দুটো পথেই অতিরিক্ত গাড়ির চাপে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে বাংলার তাজমহল ও বাংলার পিরামিডেও একই চিত্র লক্ষ করা গেছে, সারা দেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল তাজমহল ও পিরামিডে। এখানে আসা দর্শনাথীদের ঈদের আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। এ বিনোদন কেন্দ্রটি উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাবো এলাকায় অবস্থিত। তাজমহল ও পিরামিডটি একনজর দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেছে ঈদের দিন থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত। ছোট পরিসরে তাজমহলটি নির্মাণ করা হলেও এখানে আসা দর্শনার্থীদের আনন্দের যেন কমতি নেই। আগতরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে সময় কাটান ফটোসেশন নিয়ে। বিভিন্ন অঙ্গি-ভঙ্গিতে কে কিভাবে ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন দর্শনার্থীরা।
বাংলার তাজমহলের প্রতিষ্ঠাতা ও চিত্র পরিচালক আহসান উল্যাহ মনি জানান, করোনায় গত তিন বছরের তুলনায় এবারে লোকজনের আগমন ছিল অনেক বেশি। পানাম নগরীর দায়িত্বে থাকা বুকিং সহকারী মঞ্জুর হোসেন জানান, তিন বছর পর এবারে আশানুরূপ দর্শনার্থীদের সমাগম হয়েছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ কয়েক হাজার দর্শনার্থী পানাম নগরীর আদিরূপ উপভোগ করে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক এস এম রেজাউল করিম জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ফাউন্ডেশন এলাকায় পর্যটকদের ভিড় ছিল অনেক। পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post