এ বছর ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রথম দিনটি নিয়ে আরব ও মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ঈদ শুরু হবে শুক্রবার। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এবার ঈদ শনিবার হবে। উভয়ক্ষই নিজেদের জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনার ভিত্তিতে এমনটি দাবি করছেন।এই মতভেদের নেপথ্যে সূর্যগ্রহণ ও অন্যান্য কিছু কারণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবে পরিষ্কার আবহাওয়ায় শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে বিতর্কের অবসান ঘটবে।
অবশ্য অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, জাপান ও ফিলিপাইন সরকারিভাবে শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর বলে ঘোষণা দিয়েছে। দেশগুলোতে বৃহস্পতিবার শাওয়ালের চাঁদ দেখতে না পাওয়ার পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পূর্বাভাসে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন এবং শাওয়ালের প্রথম দিন শুক্রবার হবে। ইংরেজি পঞ্জিকায় তা হবে ২১ এপ্রিল। এর ফলে রমজান মাস হবে ২৯ দিনের।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে পৃথিবীর অনেক দেশে যে জ্যোতির্বিদ্যাগত কিছু ঘটনা ঘটবে। এর মধ্যে রয়েছে সূর্যের পূর্ণগ্রহণ। ফলে খালি চোখে বা টেলিস্কোপের মাধ্যমে অর্ধচন্দ্রের দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমন কিছু হলে রমজানের চান্দ্র মাস পূর্ণ হবে। ৩০ দিন রোজ পালন শেষ হবে শুক্রবার। ফলে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন এবং ঈদুল ফিতর হবে শনিবার, ২২ এপ্রিল।
সৌদি আরবের সুপ্রিম কোর্ট উম্ম আল-কুরা ক্যালেন্ডার অনুসারে, বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যারা খালি চোখে বা দূরবীনের মাধ্যমে অর্ধচন্দ্র দেখেছেন তাদের কাছে তাদেরকে নিকটস্থ আদালতকে জানাতে বা নিকটতম শহরের কেন্দ্রে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
মিসরের ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড জিওফিজিক্স (এনআরআইএজি) সোমবার বলেছে, তাদের গণনার ভিত্তিতে ঈদুল ফিতর হবে ২১ এপ্রিল (শুক্রবার)। এনআরআইএজি একটি বিবৃতিতে বলেছে, বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) হবে পবিত্র রমজান মাসের শেষ দিন এবং শুক্রবার হবে শাওয়ালের প্রথম দিন।প্রতিষ্ঠানটি মাসের চাঁদ দেখার ওপর সূর্যগ্রহণের প্রত্যাশিত প্রভাব অস্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার কায়রোর স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৩৪ মিনিটে বিশ্ব সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবে।
এই সময় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেবে। গ্রহণটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সময় নেবে। এনআরআইএজি-র প্রধান গাদ এল-কাদি বলেছেন, বর্তমান হিজরি ১৪৪৪ সালের শাওয়াল মাসের শুরু হবে ২১ এপ্রিল (শুক্রবার) শাওয়াল মাসের অর্ধচন্দ্র কায়রোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ১৪ মিনিটে দেখা যাবে। তিনি বলেন, নতুন অর্ধচন্দ্র ওই দিন সূর্যাস্তের পর মক্কার আকাশে ২৩ মিনিট এবং কায়রোতে ২৭ মিনিট এবং মিসরের গভর্নরেটগুলোতে ২৪-২৯ মিনিট আকাশে থাকবে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, আরব ও ইসলামি রাজধানী এবং শহরগুলোতে নতুন অর্ধচন্দ্র সূর্যাস্তের পরে ১০-৩৫ মিনিট থাকবে। এল-কাদি আরও বলেছেন, শাওয়াল মাসের অর্ধচন্দ্র দেখার বিষয়ে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্রের (আইএসি) ঘোষণার পর তারা এই বিবৃতি দিয়েছেন। আইএসি বলেছে, ২৯ রমজান বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) শাওয়াল মাসের চাঁদ খালি চোখে দেখার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই ঈদুল ফিতর ২২ এপ্রিল (শনিবার) হতে পারে।
আবুধাবিভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থাটি নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের ভবিষ্যদ্বাণীটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং ঈদের সঠিক তারিখটি কেবল নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অর্ধচন্দ্র দেখা খুবই কঠিন। কারণ এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট টেলিস্কোপ, পেশাদার পর্যবেক্ষক এবং পরিষ্কার আবহাওয়ার প্রয়োজন। আরব ও ইসলামী বিশ্বের কোথাও খালি চোখে বৃহস্পতিবার চাঁদ দেখা সম্ভব নয়। লিবিয়া থেকে শুরু হওয়া পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশ বাদে বেশিরভাগ আরব দেশে টেলিস্কোপ দিয়ে বৃহস্পতিবার অর্ধচন্দ্র দেখা সম্ভব নয় এবং তাই শনিবার সম্ভবত ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই কারণগুলোর সংমিশ্রণ সাধারণত এক সঙ্গে খুব কমই ঘটে। তাই আরব বিশ্বের কোথাও টেলিস্কোপ ব্যবহার করেও শাওয়াল মাসের অর্ধচন্দ্র দেখা যাবে বলে আশা করা যায় না। আইএসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসলামী বিশ্বের কিছু অংশ থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে অর্ধচন্দ্র দেখার সম্ভাবনার কারণে এবং সূর্যাস্তের আগে সংঘটিত হওয়ার কারণে এবং ইসলামিক বিশ্বের সব অঞ্চলে সূর্যাস্তের পরে চাঁদের অস্ত যাওয়ার কারণে আশা করা হচ্ছে অধিকাংশ দেশ শুক্রবার শাওয়াল মাস শুরু হওয়ার ঘোষণা দেবে।
যে দেশগুলোতে শুধু খালি চোখে সঠিক দৃষ্টিশক্তি বা টেলিস্কোপের সাহায্যে স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখা প্রয়োজন তারা ৩০ দিন রোজা রাখবে এবং শনিবার ঈদুল ফিতর পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সৌদি জ্যোতির্বিদ ড. আবদুল্লাহ আল-মিসনিদ বলেছেন, হিজরি মাস যখন ৩০ দিনে পূর্ণ হয়, তখন উম্ম আল-কুরা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমরা আগে থেকে মাসের শুরু এবং শেষের সময় জানতে পারি। আমরা শতভাগ নিশ্চিত থাকি যে, এটি আসলে ৩০ দিনের মাস, কারণ উম্ম আল-কুরা ক্যালেন্ডারের জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনা সুনির্দিষ্ট।
তিনি আরও বলেন, যখন মাসটি উম্ম আল-কুরা ক্যালেন্ডার অনুসারে ২৯ দিনের হয়, যেমন চলতি বছরের রমজানের মতো, তখন কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না যে মাসটি আসলে ২৯ বা ৩০ দিনের হবে। আল-মিসনিদ বলেছেন, ২৯ রমজানের সূর্যাস্তের প্রথম মিনিট, যখন অর্ধচন্দ্র দেখার ফলাফল জানা যাবে তার আগ পর্যন্ত কেউ-ই ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে পারবে না যে ১৪৪৪ সালের রমজান মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হবে। যিনি বলছেন রমজান মাস ২৯ দিনের, তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনার ওপর ভিত্তি করে বলছেন, শরীয়ত সম্মত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নয়। এটি ঘটতেও পারে আবার নাও হতে পারে, অতীতে এমনটি অনেকবার ঘটেছে।
আল-মাজমার জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপদেষ্টা সৌদি জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবদুল্লাহ আল-খুদাইরি বলেছেন, বৃহস্পতিবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিষ্কার আবহাওয়া। টুইটারে একাধিক টুইটে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সূর্যাস্তের পরে অর্ধচন্দ্র দেখা নিঃসন্দেহে একটি প্রভাব ফেলে এবং আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে অর্ধচন্দ্র যত বেশি সময় থাকবে, তা দেখা তত সহজ হবে। কখনও কখনও দীর্ঘ অবস্থান এবং আবহাওয়ার কারণে তা দেখা সম্ভব হয় না। আবার কখনও কখনও সংক্ষিপ্ত সময় থাকার পরও তা দেখা সম্ভব।
আল-খুদাইরি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২৯ রমজান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অর্ধচন্দ্র সূর্যাস্তের পরে হাওত সুদাইরে অবস্থিত মাজমাহ ইউনিভার্সিটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির এলাকায় ২৪ মিনিটের জন্য থাকবে। অর্ধচন্দ্র দেখার বিষয়টি নির্ভর করছে আবহাওয়ার স্বচ্ছতার ওপর। গাণিতিকভাবে, শুক্রবার শাওয়াল মাসের অর্ধচন্দ্র সূর্যাস্তের পর ৮৫ মিনিট থাকবে এবং সৌদি আরবের শহরগুলো থেকে দেখা যাবে।
সূত্র: সৌদি গ্যাজেট
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post