পাবনার ঈশ্বরদীতে আজ সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড হয়েছে। দিনভর বইছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার এই প্রভাব পড়েছে গোটা জেলায়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকরী ফসল লিচুর। এদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের শ্রমিক ও বিদেশি নাগরিকেরা। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেই তাঁরা দিনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিদেশি নাগরিকদের কর্মস্থল ও আবাসিক এলাকার বাইরে খুব কম দেখা যাচ্ছে।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, ঈশ্বরদীতে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছে। এর আগে গত শনিবার ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। রূপপুর এলাকার লিচুচাষি খায়রুল ইসলাম বললেন, এমনিতেই চলতি বছর লিচুগাছে ৬০ শতাংশ ফুল এসেছে। এর মধ্যে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে। এমন আরও কদিন চললে এবার ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটবে।
আজ দিনভর ঈশ্বরদী পৌর শহর ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকাই জনমানবশূন্য। দোকানপাট বন্ধ। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে নেই। তবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেই মাঠে কাজ করছেন খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা। কেউ জমিতে সেচ দিচ্ছেন, কেউবা পরিষ্কার করছেন জমির আগাছা। গ্রিনসিটিতে পুরো ভিন্ন চিত্র । যে এলাকাটি প্রতিদিন শত শত বিদেশি নাগরিকের পদচারণে মুখর থাকে, সে এলাকা জনমানবশূন্য। গ্রিনসিটির সামনের দোকানগুলোও বন্ধ। কিছু দোকানি দোকান খুলে রাখলেও রোদ থেকে মালামাল রক্ষা করতে তা মোটা কাপড়ে ঢেকে রেখেছেন। কাউকে কিছু প্রশ্ন করলে উত্তর দিচ্ছিলেন, ‘আগুন আগুন! আগুনের মতো গরম।
রূপপুর প্রকল্পর কয়েকজন শ্রমিক জানান, গরমে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন। প্রচণ্ড তাপ উপেক্ষা করেই তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। তবে নিজেরা কিছুটা তাপ সইতে অভ্যস্ত হলেও বেশি বিপদে পড়েছেন প্রকল্পে নিয়োজিত রুশ নাগরিকেরা। তাঁদের কারও মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তাঁরা বাইরে বের না হওয়ায় গ্রিনসিটির আশপাশের দোকানিদের ব্যবসা এখন মন্দা বলে জানালেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। উপজেলার দাশুড়িয়া এলাকায় ফসলের মাঠে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁরা জানান, একদিকে রোদে পুড়ে জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে আগাছা জমেছে। তাই বাধ্য হয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে মাঠে নেমেছেন। মনে হচ্ছে চামড়া পুড়ে যাচ্ছে।
কর্মরত শ্রমিক মোতালেব হোসেন বলেন, ‘তাপ সবের পারতেছিনে। শরীলডে পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তুক কিছু করারও নাই। কাজ না করলি খামু কী? তাই মাঠেত পড়ে আছি। প্রচণ্ড এই তাপপ্রবাহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ কমার কোনো আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আরও দু–এক দিন এমন থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post