২০১৪ সালে সংঘাত শুরু হয় ইয়েমেনে, এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। সে সময় সৌদির নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় ওমান, এতে ওমানকে তিরস্কার করে রিয়াদ। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছর পর সৌদি আরব এখন স্বীকার করছে, ইয়েমেন ইস্যুতে মাসকাটের অবস্থানই ঠিক ছিলো।
সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে মতভেদ দূর করতে ২০১৫ সালে থেকে কাজ করছে ওমান। শেষ পর্যন্ত সৌদিকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করিয়েছে ওমান—যা দেশটির কূটনীতির বড় সফলতা বলে মনে করা হচ্ছে আল-জাজিরার বিশ্লেষণে।
ইয়েমেনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে ৯ এপ্রিল দেশটির রাজধানী সানায় হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সৌদি আরব ও ওমানের প্রতিনিধিরা। দরিদ্র দেশটিতে আট বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে।
ওমানের মধ্যস্থতায় সানায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠক ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে অনেকের মধ্যে সতর্ক আশাবাদ তৈরি করেছে। ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধে ওমানের বিরামহীন প্রচেষ্টার বিষয়টি উঠে এসেছে আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণে।
আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির অনাবাসিক ফেলো আফরাহ নাসের আল-জাজিরাকে বলেন, ইয়েমেন ইস্যুতে শুরু থেকেই ওমান যুক্তি দিয়ে কথা বলে আসছিল।
তারা প্রথম থেকেই বলেছিল, ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপে সমাধান আসবে না; বরং শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক রাজনৈতিক আলোচনাতেই সমাধান আসবে।
আট বছর পর ওমান প্রমাণ করছে, ইয়েমেন ইস্যুতে মাসকাটের অবস্থানই ঠিক। ইরান-সমর্থিত হুতিদের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এখন সৌদি আরব প্রস্তুত বলে মনে হয়। কারণ, চলমান এ যুদ্ধের ব্যয় সৌদির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে একটি সম্মানজনক প্রস্থানের ব্যাপারে রিয়াদকে রাজি করিয়েছে ওমান। আবার তারা হুতিদেরও একটি সমঝোতার ব্যাপারে রাজি করিয়েছে এ প্রসঙ্গে জাপানের টোকিওর ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক আবদুল্লাহ বাবুদ আল-জাজিরাকে বলেন, সৌদি আরব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এ যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এ যুদ্ধ রিয়াদের জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
এদিকে, শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি হিসেবে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রথমবারের মতো বন্দি বিনিময় হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, একসঙ্গে প্রায় ৯০০ বন্দি বিনিময়ের ঘটনা সৌদি আরব এবং হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ আস্থা অর্জনকেই প্রমাণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হুথিদের পরিচালিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন জানায়, শুক্রবার দুপুরের দিকে প্রথম দু’টি ফ্লাইট একযোগে সরকার-নিয়ন্ত্রিত শহর এডেনে ৩৫ জন এবং হুথি-নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় ১২৫ জনকে নিয়ে অবতরণ করে।
আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির অনাবাসিক ফেলো আফরাহ নাসের বলেন, শান্তি আলোচনায় বিবদমান পক্ষগুলোর গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ওমানের অধ্যবসায় অবশেষে ফল দিচ্ছে। শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে কাজ করা, যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে সরাসরি আলোচনার টেবিলে আনার পাশাপাশি ওমানের ভূমিকা এখন মুখরক্ষাকারীর মতো।
যুদ্ধরত পক্ষগুলো এই তৃতীয় পক্ষের (ওমান) ভূমিকার ব্যাপারে মরিয়া, যারা সবার মুখ রক্ষা করতে পারে, যার সহায়তায় জয়-পরাজয়ের ঘোষণা ছাড়াই সংঘাতের অবসান ঘটতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post