ঘুষ নিয়ে ভিসা দেওয়ার অভিযোগে গত মার্চে ঢাকার সৌদি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগের সাবেক প্রধান ও উপরাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ ফালাহ মুদাহি আল-শামারি এবং কনস্যুলার বিভাগের উপপ্রধান খালেদ নাসের আয়েদ আল-কাহতানিকে গ্রেপ্তার করে সৌদি তদারকি ও দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ (নাজাহা)। অভিযোগ উঠেছে, এ দুই কর্মকর্তা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫ কোটি ৪০ লাখ সৌদি রিয়াল ঘুষ নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা।
ঢাকার সৌদি দূতাবাস থেকে ঘুষের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশেও তদন্ত শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ তদন্তে নেমেছে। এরই মধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের অর্থ-সম্পদের বিস্তারিত তথ্য জানতে শুরু হয়েছে চিঠি চালাচালি। অর্থ-সম্পদের বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সিআইডি।
গত ৫ মার্চ এ ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ঢাকা দূতাবাসের সাবেক দুই কর্মকর্তাসহ আট বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, সৌদি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা ও বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির কয়েকজন মালিক ২১৫ কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন। পুরো অর্থ নেওয়া হয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে। হুন্ডিতে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গুলশান ও বনানীর দুটি মানি এক্সচেঞ্জের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি দূতাবাসকেন্দ্রিক যে চক্র সৌদি আরবে ভিসা বাণিজ্যে জড়িত, তাদের সঙ্গে ওই এজেন্সিরগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, সৌদি দূতাবাসের সাবেক দুই কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় গুলশানের অভিজাত হোটেল ‘ব্লু বেরি’তে ডেকে নেওয়া হতো। তাঁদের দেওয়া হতো বিভিন্ন উপহার, অনৈতিক কাজে অংশ নেওয়ার ফাঁদ ও গোপনে তা ভিডিও করে অনেক সময় প্রতারণাও করা হতো। দূতাবাসের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ নীতি’ ও ফাঁদে ফেলার কৌশল নেওয়ার ঘটনায় সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হচ্ছে।
পুলিশের উচ্চ পদের এক কর্মকর্তা জানান, সৌদিতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশির বাড়িতে মার্চে তল্লাশি চালিয়ে ২ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার রিয়াল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া সোনা ও দামি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যা অবৈধ ভিসা বিক্রির টাকায় কেনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, সৌদিতে বাংলাদেশিদের কাছে পাওয়া অর্থ পাচার করে নেওয়া হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post