কয়েক দিন আগের ভয়াবহ আগুনের রেশ না কাটতেই আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বঙ্গবাজারে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে বঙ্গবাজারের ভস্মীভূত ভবনের পাশের মালেকা মার্কেটে আগুন লাগে, ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিটের প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এই আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। এদিকে গতকালের আগুনের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ফুলবাড়ীয়া এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে। অন্যদিকে অল্প দিনের ব্যবধানে আবারও আগুনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ফায়ার সার্ভিস। তারা এই এলাকার সব মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই করবে বলে জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৯৩১টি কাপড়ের দোকান পুড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। এই অগ্নিকাণ্ড ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বরিশাল প্লাজার পাশের বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট লাগোয় মালেকা মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘৬ তলা ওই ভবনটির ৪ তলায় গোডাউনে আগুন ধরেছিল। আমরা যখন জানতে পারলাম, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় মানুষ বসবাস করেন তখনই ব্রিদিং অ্যাপারেটাস (সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরে আমাদের ফায়ার ফাইটাররা ভেতরে চলে গেছেন। জায়গাটা খুবই সংকীর্ণ, খুবই ক্রিটিক্যাল প্লেস। আগুনের উৎস এখনো জানা যায়নি, তবে প্রাথমিক ধারণা এটি শর্টসার্কিট থেকে হতে পারে। কারণ গোডাউনের ভেতরে আমরা দেখতে পেয়েছি, বৈদ্যুতিক তারের কিছু অসামঞ্জস্য রয়েছে। ওখান থেকে শর্টসার্কিট হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাজউক এবং আমাদের ফায়ার সেফটি লাইসেন্স কোনোটিই ছিল না এই ভবনের। আমরা এই ভবনের মালিকদের ও নেতাদের বলেছি, এখানে আমরা অ্যাসেস করে দেখতে চাই আশপাশের ভবনগুলো কী অবস্থায় আছে। যেহেতু একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।’ গতকালের অগ্নিকা-ের পর আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় ফুলবাড়ীয়ার অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ীর। তারা সবাই একই ধরনের কথা বলেছেন। বরিশাল প্লাজার চাঁদপুর স্টাইল নামে একটি দোকান পরিচালনা করেন মোহাম্মদ রাব্বি। তিনি বলেন, ‘আগুন কেন লাগছে তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। সরকার তদন্ত করছে, যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সহায়তা করার চেষ্টাও করছে। কিন্তু পরপর দুটি আগুনের ঘটনায় সবার মধ্যে ভয় ঢুকেছে। আমরা যারা এখানে ব্যবসা করছি কিংবা যারা এখানে কেনাকাটা করতে আসছেন তারাও আতঙ্কে আছেন।
রাব্বি আরও বলেন, ‘সকালে (গতকাল) যখন আগুন লাগে আমরা দোকান রেখে দৌড়ে পালাই। যাই হোক আগুন ছড়ায়নি, তাই পরে আমরা এসে আবার দোকান খুলেছি। এখন মনে হচ্ছে আবার কখন কোন সময় না হুট করে আগুন লেগে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু এভাবে কতদিন থাকব?’ গতকাল এফডিসিতে এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে আগুন লেগেছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসও আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখছে। এছাড়াও অগ্নিকা-ের সময় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলাকারীদের উদ্দেশ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এই হামলার ঘটনায় বংশাল থানায় হওয়া মামলার তিন আসামির এক দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। তারা হলেন- মো রাজু, শাওন ও শাহাদাৎ হোসেন। গত বৃহস্পতিবার বংশাল থানার এসআই ইস্রাফিল হাওলাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।সরানো হচ্ছে ধ্বংসস্তূপ : গতকাল দুপুরে বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই জড়ো হন সেখানে। পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ফুলবাড়িয়া এলাকার যেসব দোকান খোলা রয়েছে সেগুলোতে কেনাকাটা করতে দেখা যায় অনেককে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন আগুনের কারণে ক্রেতা অনেক কম আসছে।
গতকাল সকাল থেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা পুলিশের বসানো অস্থায়ী বুথে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তবে অনলাইন সার্ভার জটিলতার কারণে জিডি করার প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব জিডিতে ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক হিসাব তুলে ধরছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে অগ্নিকাণ্ডস্থলেই গতকাল থেকে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে দোকান বসানোর কথা ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের সব আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় বসা যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে দোকান বসানো সম্ভব হচ্ছে না। আবর্জনা ও ধ্বংসস্তূপ অপসারণ শেষ হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অস্থায়ীভাবে দোকান বসানোর কাজ শুরু হবে। এখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। তা কাল (আজ রবিরার) দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে জমা দেওয়া হবে।
তবে গতকাল পুড়ে যাওয়া দোকানের দক্ষিণ পাশের মূল সড়কে অনেক ব্যবসায়ীকে চৌকিতে বসে কাপড় বিক্রি করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, ইদের আগে সব পুড়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে কিছু করতে না পারায় বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে বসেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দেশ-বিদেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে চেয়েছেন অনেকেই। যারা সহযোগিতা করতে চান, তারা যেন সেটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে করেন। এ জন্য আইএফআইসি ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। এই অর্থ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের কাছে দেওয়া হবে। তারা সেটি ব্যবসায়ীদের বিতরণ করবেন।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post