পরিবার প্রিয়জনকে একটু ভালো রাখার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান অনেকেই। দেশে কর্মসংস্থান না হওয়ায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় বিদেশ যেয়ে কেউ লাশ হয়ে ফিরতে চান না। অথচ ভাগ্যের নির্মমতায় মাঝ পথেই থমকে যায় অনেকের জীবন। অধিকাংশ প্রবাসীর সঠিক উপায়ে বিদেশ না যাওয়ায় পরিবার তার লাশ পেলেও ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়। তবে, সঠিক উপায়ে বিদেশ যাওয়ার পর মারা গেলে মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ পায় পরিবার এমন উদহরন মিললো এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর ক্ষেত্রে।
এক কোটির উপর প্রবাসী বহির্বিশ্বে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাদের কর্মস্পৃহা, মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সুনাম অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সোনার হরিণের আশায় বিদেশ সবাই গেলেও ভাগ্যের নির্মমতায় কাউকে দেশে ফিরতে হয় বাক্সবন্দী হয়ে। সঠিক মাধ্যমে বিদেশ না যাওয়ার ফলে লাশ পেলেও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না অধিকাংশ প্রবাসীর পরিবার।
তবে, সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশ গেলে এসব ভোগান্তি থেকে রক্ষা মেলে এমন উদাহরণ মিললো এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর ক্ষেত্রে। হৃদয় খান নামে উক্ত প্রবাসী হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সহযোগিতায় ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার এর মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া যান। ভাগ্যের নির্মমতায় সেখানে যাওয়ার পরপরই তিনি মারা যান।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় তার মরদেহ কোম্পানির খরচে দেশে আনার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। শুধু মরদেহ দেশে এনেই দায়িত্ব শেষ করেনি এই রিক্রুটিং এজেন্সি। তারা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণও আদায় করে দিয়েছেন পরিবারকে।
মালয়েশিয়া কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি নিজেদের তরফ থেকেও নগদ দুই লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়। বুধবার (৫ এপ্রিল) ঢাকা বারিধারায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে নিহত হৃদয় মন্ডলের মায়ের হাতে এই চেক তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী ফখরুল ইসলাম। তাদের এমন মানবিকতায় মুগ্ধ হন নিহতের মা হুছনেয়ারা বেগম।
শুধুমাত্র পরিবার প্রিয়জনকে একটু ভালো রাখার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান অনেকেই। দেশে কর্মসংস্থান না হওয়ায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় বিদেশ যেয়ে কেউ লাশ হয়ে ফিরতে চান না। অথচ ভাগ্যের নির্মমতায় মাঝ পথেই থমকে যায় অনেকের জীবন। অনেক সময় দেখা যায়, এক কোম্পানি থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় অবৈধভাবে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে আগের কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয় না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করতে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসকে মূল ভূমিকা পালন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও হৃদয় মন্ডলের মরদেহ দেশে পাঠাতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা নাজমুল শাহাদাত বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
বিদেশে শ্রম বিক্রি করে দেশে রেমিটেন্স পাঠানো শ্রমিকের মৃত্যুর পর তার পরিবারের পাওনা ক্ষতিপূরণ আদায়ে দায় রয়েছে সরকারের। আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ীও অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আর তাই, প্রবাসীদের মৃত্যুর কারণ এবং তাদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারের আরো জোরালো ভূমিকার দাবী জানিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post