ফিলিস্তিনের অধিকৃত জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। বুধবার (৫ এপ্রিল) টানা দ্বিতীয় রাতে ইবাদত ও নামাজরত মুসল্লিদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর ইসরায়েলি পুলিশ ৩৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি পুণ্যার্থীকে গ্রেফতার করেছে।
পবিত্র রমজানে দখলদার ইসরায়েলের এমন কান্ডে তীব্র সমালোচনা করেছে ওমান। বুধবার (৫ এপ্রিল) ওমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলা এবং মুসল্লিদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এই ধরনের ইসরায়েলি কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার স্পষ্ট লঙ্ঘন-যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের অনুভূতিকে উস্কে দেয়। ওমান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের ক্রমাগত, বেআইনি এবং উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। একইসাথে ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে ওমান।
এদিকে আল-আকসায় হামলা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন। একইসঙ্গে মুসল্লিদের নামাজে বাধা দেওয়ার কোনও অধিকার ইসরায়েলের নেই বলেও জানিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-আকসা মসজিদে হামলার মতো ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, পবিত্র আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করাসহ সেখানে ধর্মীয় ঐতিহ্য পালন করা ‘ফিলিস্তিনি মুসলমানদের একচেটিয়া অধিকার’।
মনসুর বলেন, ‘চলমান পবিত্র রমজান মাস-সহ অন্য যে কোনো সময়ে পবিত্র আকসা মসজিদে ধর্মীয় কর্তব্য পালন ও নামাজ আদায় করা ফিলিস্তিনি মুসলিম ইবাদতকারীদের অধিকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুসল্লিদের কখন নামাজ পড়তে হবে আর কখন নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত করা যাবে না এটা বলার কোনও অধিকারই ইসরায়েলের দখলদার কর্তৃপক্ষের নেই।’
এদিকে আল আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলা করায় ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগ। একইসঙ্গে ২২ সদস্য দেশের এই আঞ্চলিক সংগঠনটি আল-আকসা মসজিদে অভিযানের বিষয়ে জরুরি বৈঠকেও বসেছে। আরব লীগের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হোসাম জাকি আল জাজিরাকে বলেছেন: ‘(পবিত্র আল আকসা মসজিদে চলমান ঘটনার) দায় আমরা সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলি সরকারের বলে মনে করছি। ইসরায়েল যা করছে তা প্রকাশ করতে আমরা রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা এমন নয় যে আল-আকসা মসজিদে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে আমাদের আর একটি অজুহাত দরকার। তাদের অজুহাত কখনোই ফুরিয়ে যায় না। তারা সবসময় আপনাকে বলে, সেখানে যুবকদের ব্যারিকেডিং, বন্দুক সংগ্রহ করা ইত্যাদি আছে। আমরা এটা অনেকবার শুনেছি। এই মুহূর্তে এটি প্রায় অপ্রাসঙ্গিক। ইসরায়েলে এখন এমন একটি সরকার রয়েছে যারা ফিলিস্তিনি জনগণের ক্ষতি করতে উদ্যত।’
এদিকে আল-আকসায় অভিযানের বিরুদ্ধে তুরস্কে বিক্ষোভ করেছে বিক্ষোভকারীরা। আল জাজিরা বলছে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ফাতিহ মসজিদের বাইরে বিক্ষোভকারীরা বুধবার আল-আকসা মসজিদ থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে।
এদিকে, আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে সহিংসতা নিয়ে একটি জরুরি অধিবেশনে বসবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। কূটনীতিকরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের অনুরোধে রুদ্ধদ্বার এই অধিবেশনটি ডাকা হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post