দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক বিদেশগামীরা। কেউ কেউ স্বীকার হচ্ছেন নির্যাতনের, কেউ খোয়াচ্ছেন টাকা, আর অনেক নামমাত্র বিদেশে গিয়ে ফিরতে হয়েছে শূণ্য হাতে। একবার এদের খপ্পরে পড়লে দুর্ভোগ হয়ে যায় জীবনের সঙ্গী। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান বরিশালের যুবক আল আমিন গাজী, কিন্তু প্রতারণার শিকার হয়ে আল আমিন গাজী এক ফেসবুক পোস্টে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন।
গত বুধবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে আল আমিন লিখেছেন, ‘আমি বোকাই রয়ে গেলাম, নিজের জমানো ও ধার করা টাকা সব শেষ। আল্লাহ, তুমি আমাকে সাহায্য করো, যেন মানুষের সব টাকা পরিশোধ করার পরে আমার মৃত্যু হয়। আল্লাহ এই বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা করো। আমি প্রতারিত হয়েছি, দেশে ফিরতে চাই’। একই দিন আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সৌদিতে এসে সাপ্লাই ভিসার ফাঁদে পড়েছি। জানি না কীভাবে দেশে ফিরবো।’
বরিশাল নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাক কলোনির বাসিন্দা আল আমিন গাজী ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে স্থানীয় দালাল সুমন হাওলাদারের মাধ্যমে গত ১৮ মার্চ সৌদি আরব যান। সেখানে তাঁকে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দেশটিতে গিয়ে আল আমিন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সানজিদা আক্তার মীম গত মঙ্গলবার কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই দালাল সুমনকে পুলিশ আটক করে। তবে আল আমিনকে দেশে ফেরত আনার শর্তে মুচলেকা রেখে বুধবার রাতে সুমনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনকে দেশে না আনা পর্যন্ত সুমনকে নজরদারিতে রাখা হবে।
আল আমিনের স্ত্রী মীম বলেন, বিমানবন্দর থেকে আল আমিনকে রিয়াদের একটি ভবনের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে সেখানকার দালাল। ওই কক্ষে আরও ৬০-৭০ জনকে আটকে রাখা হয়েছে। তারাও দালালের খপ্পরে পড়ে সৌদি গিয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা দালাল সুমনের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেন। পরে আমরা থানায় জিডি করলে সুমনকে পুলিশ আটক করে। এখন আল আমিন একবেলা-আধবেলা খেয়ে রিয়াদে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন, দেশে ফেরার জন্য ছটফট করছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত সুমন হাওলাদার বলেন, আল আমিনের সঙ্গে যে রকম চুক্তি হয়েছে সেভাবেই তাঁকে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছে। যাওয়ার পরে কাজ পেতে কিছু সময় লাগে। তাছাড়া প্রথমে সবাইকেই শ্রমিকের কাজ করতে হয়। কিন্তু আল আমিন কষ্টের কাজ করতে পারবে না বলে এখন নানা অভিযোগ তুলছে।
বরিশাল কোতোয়ালি থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আল আমিন গাজীকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিচ্ছি। সুমন হাওলাদার সাত দিনের মধ্যে আল আমিনকে দেশে ফিরিয়ে আনবে এমন মুচলেকা দিয়েছে। এরপর আল আমিনের পরিবারের সম্মতিতে সুমনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post