ব্যাগেজ আইনের বৈধতাকে অপব্যবহার করে দেশে আনা হচ্ছে হাজার হাজার পিস সোনার বার। এসব বারের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের। বৈধ পন্থায় ‘অবৈধ’ এ সোনার কারবারের নেপথ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও দেশের কিছু সোনা মাফিয়া। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, অসৎ উদ্দেশ্যে বৈধ কোনো কাজ করলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও অপরাধবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘বৈধ সুযোগের অপব্যবহার করে কেউ সোনা পাচার করলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত একই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বছরে একাধিকবার যেন সোনার বার নিয়ে আসতে না পারে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা। তা না হলে চোরাকারবারিরা অবৈধ টাকা আয়ের জন্য এ সুযোগ বারবার গ্রহণ করবে।’
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমসের উপকমিশনার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বৈধ উপায়ে ঘোষণা দিয়ে একজন যাত্রী এক যাত্রায় সর্বোচ্চ দুটি সোনার বার আনতে পারেন। এক যাত্রায় দুটি বার আনতে আইনগতভাবে বাধা দেওয়া যায় না।’ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ঘোষণা দিয়ে দুটি সোনার বার আনার সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রাম দিয়ে গাণিতিক হারে বাড়ছে সোনার বার আনার পরিমাণ।
ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ঘোষণা দিয়ে আনা হয় ২৩ হাজার পিস সোনার বার, জানুয়ারিতে যা ছিল ১২ হাজার পিস। ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার পিস। এর আগের ছয় মাস গড়ে ১৩ হাজার পিস সোনার বার আনেন প্রবাসীরা। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে শুল্ক পরিশোধ করে বৈধভাবে সোনার বার এসেছে ৬৩ হাজার ২৫০ পিস।
২০২১-২২ অর্থবছরের শুল্ক পরিশোধ করে আনা সোনার বারের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার পিস। জানা যায়, সোনা পাচারে সরকারের কড়াকড়ি এবং ব্যাগেজ আইন শিথিলের পর নতুন কায়দায় সোনা পাচার শুরু করে চোরাচালান মাফিয়ারা। এ ক্ষেত্রে তারা টার্গেট করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, কাতার, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের। তারা দেশে বেড়াতে আসা প্রবাসীদের টার্গেট করে পাসপোর্ট ব্যবহার করে সোনা বহনের প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবে রাজি হলে দুই পিস সোনার বার বহনের জন্য দেওয়া হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সঙ্গে দেওয়া হয় শুল্ক বাবদ ৪০ হাজার টাকা। ওই বার বহন করে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর তুলে দেওয়া হয় সিন্ডিকেট সদস্যের হাতে। পরে ওই সোনার বার চলে যায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে।
এ নিয়ে কথা হয় ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করা কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত থেকে তারা ক্যারিয়ার হিসেবে সোনার বার এনেছেন একাধিকবার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে সোনা মাফিয়াদের নির্দিষ্ট কিছু লোক। তারা দেশে আসতে আগ্রহী প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈধ উপায়ে সোনার বার আনার প্রস্তাব দেয়। কেউ রাজি হলে তার পাসপোর্ট নেয়। পরে পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুটি সোনার বার কেনার রসিদ দেয়। এরপর বার বাহকের মজুরি হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, সোনার বার এবং শুল্ক বাবদ বাংলাদেশি ৪০ হাজার টাকা সমমূল্যের ডলার কিংবা দিরহাম তুলে দেওয়া হয়। শুল্কায়ন শেষে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে ওই সোনার বার তুলে দেওয়া হয় বাইরে অপেক্ষমাণ সোনা পাচার চক্রের সদস্যদের হাতে।
ব্যাগেজ আইনে বলা হয়েছে, একজন যাত্রী সর্বোচ্চ দুটি সোনার বার (২৩৪ গ্রাম বা ২০ ভরি ওজন) ঘোষণা দিয়ে আনতে পারবেন। এর বাইরে ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার বিনা শুল্কে আনতে পারবেন। তবে সেটি ২২ ক্যারেটের হতে হবে।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post