লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে স্বর্ণের কানের দুল খুলে নেওয়ার সময় কান্না করলে মুখ চেপে স্কুলছাত্রী পপি সাহাকে (৭) হত্যা করেন রুনা আক্তার আঁখি নামের এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত রুনা পূর্ব কেরোয়া গ্রামের আবদুল মতিনের মেয়ে ও এমরানের স্ত্রী। ভিকটিম পপি সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন ও বামনী ইউনিয়নের সাগরদি গ্রামের প্রবাসী নির্মল সাহার মেয়ে।
আদালত ও এজাহার সূত্র জানা যায়, ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর সকালে প্রাইভেট পড়ে এসে বাড়ির পাশেই পপি খেলছিল। তখন রুনা তাকে ডেকে ঘরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তার কানের দুলগুলো খুলে নেয় রুনা। এতে পপি কান্না করে উঠে। কান্নার শব্দ যেন কেউ শুনতে না পায় এজন্য মুখ ও গলা চেপে ধরলে পপি মারা যায়। পরে তার মরদেহ চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। বাড়ি ফিরলে রুনা তার স্বামীকে বিষয়টি জানায়। এতে পপির মরদেহ গুম করার পরিকল্পনা করে তারা।
পরে ঘরের দুটি দরজার একটির বাইরে তালা ও অন্যটি ভেতর দিয়ে আটকে রেখা রুনা ও এমরান ঘরে অবস্থান করছিল। এদিকে ভাত খাওয়ানোর জন্য পপিকে তার মা ববিতা রানী সাহা ডাকলেও কোন সাড়া পাচ্ছিল না। আশপাশসহ সম্ভাব্য স্থানে খুঁজেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অন্যদিকে দুপুরে রুনা ও এমরানের ঘর বন্ধ দেখে লোকজনের সন্দেহ হয়। এতে বাড়ির এক নারী মই ব্যবহার করে জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতর তাদের দেখতে পায়। পরে দরজা ভেঙে লোকজন ঘরে ঢুকে। এ সময় রুনা ও তার স্বামী পালাতে গেলে লোকজন তাদেরকে আটক করে।
ঘরের ভেতর পপির জুতা পাওয়া যায়। পরে চৌকির নিচে তাকালে বাম দিকে ঘাড় বাকানো অবস্থায় পপিকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাকে বের করতে গেলে বুঝা যায় পপির নিথর দেহ কৌশলে চৌকির নিচে বসিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন অভিযুক্তদের বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। একইদিন রাতে ববিতা বাদী হয়ে রায়পুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন রুনা ও এমরানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এছাড়া হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। একই বছর ১১ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ৩ আনা কানের দুলের লোভে স্কুলছাত্রী পপিকে হত্যা করে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। রুনার স্বামীও এ মামলার আসামি ছিলেন। তিনি হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এতে আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। রায়ের সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post